কারাগারে থাকা এইডস (এইচআইভি পজিটিভ) রোগীদের যত্ন নিয়ে একটি কর্মশালায় যোগ দিতে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া যাচ্ছে। তবে প্রতিনিধি দলে কোনো চিকিৎসক, নার্স বা ফার্মাসিস্ট নেই। যারা যাচ্ছেন তারা সবাই কারাগারের কর্মকর্তা যাদের রোগী ও তাদের চিকিৎসার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কারাগারে কর্মরত চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় এই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মালয়েশিয়া যাবেন কারাবন্দি এইডস রোগীদের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে। তারা মালয়েশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সেখানে মাটিতে জেলখানা দেখতে পাবেন। এ জন্য কারা কর্মকর্তা ও চিকিৎসা কর্মীদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করতে বলা হয়। নিরাপত্তা সেবা বিভাগের একজন উপসচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের নামের তালিকা ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয়। তালিকায় থাকা ১০ জনের সবাই কারাগারের নির্বাহী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তারা হলেন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো: শাহ আলম খান, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারা সুপার মোহাম্মদ মোকাম্মেল হোসেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহবুবুল ইসলাম ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলা প্রশাসক শাহাদাত হোসেন।
এ ছাড়া কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার হাসনা জাহান বিথী, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো: এমরান হোসেন মিয়া, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো: শাখাওয়াত হোসেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো: নিজাম উদ্দিন ও কারা অধিদপ্তরের জেলা প্রশাসক মো: সাইদুল ইসলাম। আগামী ৩-৫ অক্টোবর তিনদিনের সফরে যাচ্ছেন তারা।
কারাগারে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন যে স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নিতে এই সফরের আয়োজন করা হয়েছে। অনেক ডাক্তার ও নার্স রাগ ও হতাশার কারণে কারাগারের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক ডা. রেজা মোঃ সারওয়ার আকবর বলেন, ‘ভাই, এসব বলে কোনো কাজ হয় না। কিছুদিন আগে শ্রীমঙ্গলে স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার বা ওয়ার্কশপ হয়েছে, সেখানেও স্বাস্থ্যসেবা দেয় এমন কাউকে বলা হয়নি। সেখানে জেল সুপার ও জেলর অংশগ্রহণ করেন। এবং এটা বিদেশী! আমাদের এখানে যেতে দাও? এসব কারণে কোনো চিকিৎসক থাকতে চান না। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন ভালো চিকিৎসক পদ বাতিলের আবেদন করছেন। সবাই চলে যেতে চায়।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টরা কেন কারাগারে থাকতে চান না তার প্রমাণ এই ঘটনা। নাম ধরে কিছু বললে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
চাঁদপুর জেলা কারাগারের ফার্মাসিস্ট মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সরকারি সফর জেলা নির্ধারণ করে। এখানে সত্য কথা বললে সমস্যায় পড়বেন। যারা তাদের অধিকারের কথা বলে তাদের বান্দরবান-খাগড়াছড়িতে পাঠানো হয়। তাই কেউ আর কথা বলে না।’
ভোলা জেলা কারাগারের ডিপ্লোমা নার্সিং অফিসার সুপ্রকাশ বেপারী বলেন, ‘এইডসসহ যেকোনো ধরনের রোগ সংক্রান্ত আলোচনা, সেমিনার বা কর্মশালায় শুধু চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও নার্সিং কর্মকর্তাদের যাওয়ার কথা। কিন্তু কারাগারে কখনো এমন হয়েছে বলে মনে পড়ে না। আমি ২০০৪ সাল থেকে এই অবস্থা দেখছি। এর কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী শনিবার পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি আমার জানার মধ্যে নেই। অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এইডস সহ স্বাস্থ্য জ্ঞান পেতে যাওয়া এই দলে কারাগারের ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট বা নার্স নেই। এতে কারাগারে কর্মরত চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট বা ডিপ্লোমা নার্সদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট পক্ষের দাবি
কারাবন্দিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও নার্সরা এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ। তাদের অভিযোগ, কারাগারে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও নার্সরা এইডসসহ নানা রোগ নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু প্রতিনিধি দলে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যারা যাচ্ছেন তাদের কাজ কারাগারের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জেল সুপার ও কারাগারের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের বৈষম্যের কারণে কারাগারে নিয়োজিত চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নার্সিং কর্মকর্তারা চাকরি ছেড়ে দেন। গত মাসেও আটজন ফার্মাসিস্ট চলে গেছেন। বারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নার্সিং পদে লোক পাওয়া যাচ্ছে না।