সম্প্রতি দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সং/ষর্ঘের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয় সরকার আবারও ১৪ ও ১৮ সালের মতো একতরফা ভোটবিহীন নির্বাচনের পাঁয়তার করছে।অপর দিকে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে মাঠে আন্দোলন করছে।কিন্তু বিএনপির আন্দোলন দমাতে সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক নি/র্যাতন, নী/পিড়ন চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পিনাকী ভট্টাচার্য হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
বাংলাদেশের পেশাদারিত্ব নিয়ে একটা গল্প বলি। আমার বই এডিট করতে হয় প্রচুর কিন্তু আমার বইয়ের এডিটরেরা আমাকে রীতিমতো ছুলেছে। মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম বইটা এডিটে লেগেছিলো ৭৫-৮৫ হাজার টাকা। সঠিক অংকটা মনে নাই। তবে এই পরিমান টাকা প্যারিসে লাগতো না। যদি আমার বইটা ফ্রেঞ্চ ভাষায় লেখা হতো। কীভাবে জানলাম সেটা বলি।
আমি প্যারিসে একটা ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর কোর্স করছি প্রায় একবছর হলো তার কোর্স ফি ১৮০ ইউরো। ওয়ার্ল্ড ক্লাস ফ্যাকাল্টি আসেন এই কোর্সে পড়াতে। আপনি বাংলাদেশে এটা করতে পারবেন? অসম্ভব। ওয়ার্ল্ড ক্লাস ফ্যাকাল্টি লাগবে না বাংলাদেশের ফ্যাকাল্টি দিয়ে পারবেন এটা করাতে? না পারবেন না। প্যারিসের একটা সুবিধা আছে অনেকেই বেড়াতে আসেন। একটা দিন ক্লাস নিতে বললে উনারা আনন্দচিত্তেই করে দেন।
আবার দেখুন, আমার ইংরেজিতে লেখা উপন্যাস এডিট করছি একজন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপককে দিয়ে। উনি ফি নিয়েছেন ৮৫০ ইউরো। প্রত্যেক সপ্তাহে দেড় ঘন্টা করে তিনি মোটামুটি আমার ক্লাস নেন; হোমওয়ার্ক দেন। এক সপ্তাহে গড়ে এক থেকে দেড় পাতা এডিট করা যাচ্ছে। পুরো বই শেষ হতে আর মাস ছয়েক লাগবে। প্রথমে ধীরে এগুলেও এখন দ্রুত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি নিজেই নিজের লেখা এডিট করা শিখছি।
আমি বাংলাদেশে খোজ করেছিলাম কেউ বইটা এডিট করে দিতে পারবে কিনা; রাজী হয় নাই কেউ। আল্লাহ বাচাইছেন। কাউরে পাইলে আমি প্যারিসে কাউকে খোজার চেষ্টা করতাম না।
বাংলাদেশের একজন ইংরেজির অধ্যাপক এই কাজটা এই ফি তে করে দেবেন? অবশ্যই না। কারণ এই সময়ে তিনি অন্য ধান্দা করে অনেক বেশী টাকা কামাইবেন।
এই বাংলাদেশ কখনো বিশ্বমান অর্জন করতে পারবেনা। কারণ, যেখানে টাকা উপার্জনই জীবনের ব্রত বলে শেখানো হয় সেখানে সৃষ্টিশীলতা জন্মায় না, চিন্তক জন্মায় না, কর্মী মানুষ জন্মায় না।
পশ্চিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এদের জ্ঞানজগৎ এক্সেসিবল। আপনি চাইলে দুনিয়ার সেরা স্কিল অর্জন করতে পারবেন যদি আপনার জিনিসপত্র ঠিক থাকে।
আরো অদ্ভুত ব্যাপার এরা মোটেই অহংকারী না। আমাকে কখনো শুনতে হয় নাই, আরে ধুর তুমি তো ইংরেজি লিখতেই পারো না। বা আরে ধুর তোমার তো ফ্রেঞ্চ উচ্চারণই হয়না। অথচ আমাকে বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই শুনতে হয় আমি কিছুই পারিনা, আমি অশিক্ষিত, আমি হুদাই, আমি একটা আবর্জনা (কথাগুলো অবশ্য মিথ্যা নয়)।
বাংলাদেশে অহংকারী হওয়াটা বাধ্যতামূলক। নিজেকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বড় দেখানো আর অন্যকে ছোট করা, অপমান করাটা আরো দরকারী।
এইটা ভয়ংকরভাবে আছে যারা নিজেদের শিক্ষিত বলে স্যেকুলার, লিবারেল, এনলাইটেন্ড বলে দাবী করে। একজন হুজুর যদি এলিট হইতে চায় সেও এই ক্যারেক্টার রপ্ত করে ফেলে। এর ফলে বাংলাদেশ হইয়া উঠতেছে এক ইন্টেলেকচুয়াল অন্ধকুপ। আপনার সমস্ত সৃষ্টিশীলতাকে, আপনার সমস্ত সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়ার জায়গা।
এইটাই বাংলাদেশকে পিছায়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।