আ হ ম মুস্তফা কামাল হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী। এই সম্মানীয় পদে নিয়োজিত হবার পর থেকে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সহিত তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগেও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। কুমিল্লা-১০ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সম্প্রতি জানা গিয়েছে ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
দৈনিক প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার চায় আইএমএফ ঋণ সবসময় শর্তসাপেক্ষে আলোচনা শুরু না হওয়ায় শর্তগুলো এখনো পরিষ্কার নয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওয়ার সম্ভাব্য শর্ত পূরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে প্রতিবেদন তৈরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঋণ পেতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকে অর্থনীতির বর্তমান চিত্র বিস্তারিত তুলে ধরবেন। সম্মেলনের পর ঋণ নিয়ে আলোচনা শুরু করার লক্ষ্যে সংস্থাটিকে বাংলাদেশ সফরের জন্য অনুরোধ করা হবে
অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে দলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমেরও সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে
ওয়াশিংটনে আলোচনা সফল হলেই সংস্থাটির মিশন বাংলাদেশ সফর করবে আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, এনবিআরসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। IMF এর শর্তাবলী IMF স্টাফ মিশন স্টেটমেন্টে বর্ণিত হবে। কোনো নতুন শর্ত আরোপ করার কিছু নেই যদি সরকার এগুলো পূরণ করে বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে এটি এনহ্যান্সড ফান্ডিং সাপোর্ট (ইএফএফ) থেকে সম্পূর্ণ ঋণ পাবে, অন্যথায় ছোট শর্ত সহ $১৫০ দিয়ে সন্তুষ্ট হতে হবে।’
আহসান এইচ মনসুর, প্রাক্তন আইএমএফ কর্মকর্তা এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক।
সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে প্রথম আলো</em>কে বলেন, আমি ওয়াশিংটনে আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে যাচ্ছি এবং সেখানেই আইএমএফের সঙ্গে আমার প্রথম আলোচনা হবে। আমরা ঋণের প্রয়োজনীয়তা বাড়াব কিন্তু আমি দেখছি আইএমএফের দেওয়া শর্ত খারাপ নয়।’
আইএমএফ ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও ঋণের সুদ কমাতে বলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তারা তাদের কথা বলবে, আমরা আলোচনা করব।’ আমি তাদের সবার সঙ্গে একমত হতে পারছি না, যেমন ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ না হলে কোনো শিল্পের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয় এই শর্ত কীভাবে মেনে নেবেন?’
বাংলাদেশ কত ঋণ চায়?
বাংলাদেশ সরকার আইএমএফের কাছে কী পরিমাণ ঋণ চায় তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৫০ মিলিয়ন ডলার চায়। ওয়াশিংটনে আলোচনা সফল না হলে অর্থাৎ আইএমএফ কোনো শর্ত দিলে তা বাস্তবায়ন করতে চায় না, বাংলাদেশ আইএমএফের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরএসএফটি) তহবিল থেকে মাত্র ১৫ কোটি ডলার নিতে চাইবে। এই তহবিল থেকে, আইএমএফ ২০ বছরের জন্য ঋণ দেয়, ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সহ এই তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য কোনও কঠিন শর্ত পূরণ করতে হবে না।
আইএমএফ ঋণ সবসময় শর্তসাপেক্ষ। আলোচনা শুরু না হওয়ায় শর্তাবলী সরকারের কাছে এখনও অস্পষ্ট। এজেন্সির একটি স্টাফ মিশন গত মাসে ১২ দিনের জন্য ঢাকায় এসেছিল এবং মিশন চলে যাওয়ার পর আইএমএফ একটি দুই পৃষ্ঠার সমাপনী বিবৃতি জারি করে।
রাজস্ব খাতে সংস্কার, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে মন্দ ঋণ কমানো, নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা এবং ভর্তুকি কমানোসহ মোট ৯টি বিষয় বিবৃতিতে উঠে এসেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের ঋণের সঙ্গে স্টাফ মিশনের বক্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই, তবে বাংলাদেশে আইএমএফ সবসময় যেসব বিষয়ে কথা বলে আসছে সেসব বিষয় এতে রয়েছে। সে হিসেবে বাংলাদেশ মনে করে, ঋণ পাওয়ার বিষয়ে এই বক্তব্য প্রস্তুতির ইঙ্গিত
গত মাসে আইএমএফের কাছে এক চিঠিতে বাংলাদেশ বলেছে, দেশে এতদিন ধরে একটি টেকসই সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ রয়েছে দারিদ্র্যের হার কমেছে গড় আয়ু এবং সাক্ষরতার হার বেড়েছে কিন্তু এখন সময়টা একটু খারাপ (ক্রিটিকাল টাইম)। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের দাম অভূতপূর্ব হারে বেড়েছে।
এতে আরও বলা হয়, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), কয়লা, চাল, গম, ভুট্টা, সার, পাম তেল এবং সয়াবিন তেল আমদানিতে যোগ করতে হবে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি 15.12 শতাংশ তাই বাংলাদেশের পেমেন্টের ভারসাম্য এবং জরুরি ভিত্তিতে বাজেট সহায়তার জন্য অর্থ প্রয়োজন।
আইএমএফ যা চায়
আইএমএফ স্টাফ মিশন রাজস্ব বাড়ানোর সুপারিশ করে বলেছে যে জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের রাজস্ব সংগ্রহের হার এখনও কম রয়েছে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এর পাশাপাশি, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হার কাঠামো সহজীকরণ, আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। কর প্রশাসন এবং বড় করদাতাদের উপর ফোকাস। সরকার চাইলে আইএমএফের কারিগরি দল এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে।
আইএমএফ সরকার জাতীয় সঞ্চয় বন্ড বিক্রি থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা সরাসরি বাজেট থেকে আলাদা করতে চায় সংস্থাটি ধীরে ধীরে জ্বালানির দামে নতুন কৌশল বা পদ্ধতি চালু করতে চায়। এটা করা গেলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে আরও দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করা সম্ভব হবে। IMF পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক, ফিসকাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং মধ্যমেয়াদী ঋণ কৌশলে সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে
আইএমএফ পেগড লোনের সুদের হার (9 শতাংশ) তুলে নিয়েছে এবং এই সময়ে একটি সংকোচনমূলক আর্থিক নীতির পক্ষে রয়েছে এটি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, সংস্থাটি বলেছে যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির অবমূল্যায়নের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আইএমএফ বলেছে যে এটি উন্নতি করবে। ডলারের তারল্য পরিস্থিতি ব্যাংকিং খাতে বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ কমাতে চায়।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ১০টি দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি ভালো, তবে সামগ্রিক অ-পারফর্মিং লোন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পুরো ব্যাংকিং খাতে নজরদারি বাড়াতে হবে, অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পারফর্মিং লোন, এবং অপারফর্মিং লোন কমাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ব্যবস্থা জোরদার করে নিরাপত্তা রিজার্ভ বাঁচাতে ব্যাংকগুলোকে যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
সরকারের প্রস্তুতি
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মনে করছে, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আইএমএফের মনোভাব ইতিবাচক হবে এগুলো হলো- মুদ্রা প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা বিনিময় হার শিথিল করা, বিলাস দ্রব্যের কঠোর আমদানি। , সরকারি যানবাহন ক্রয় স্থগিত, কম জরুরী প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ স্থগিত, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য সরকারি অফিসের সময়সূচী পরিবর্তন ইত্যাদি। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমাতে। সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বলা হবে
জানা গেছে, আইএমএফের সঙ্গে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে সেগুলো হলো ঋণের সুদের হার প্রত্যাহার, বাজেট থেকে জাতীয় সঞ্চয় বন্ড বিক্রিকে আলাদা করা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার। সরকার আপাতত এসব করতে চায় না
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সফল হলে, সরকার আইএমএফের জন্য একটি অভিপ্রায় পত্র প্রস্তুত করবে এই অভিপ্রায় পত্রে সরকার কী শর্তে ঋণ নিতে চায় এবং বিনিময়ে কী শর্ত পূরণ করতে চায় তা উল্লেখ করা হবে। এই উদ্দেশ্য পত্রটি সাধারণত অর্থমন্ত্রী দ্বারা স্বাক্ষরিত হয় এটি তারপর IMF বোর্ডে যাবে এবং বোর্ড অনুমোদন করলেই ঋণ পাওয়া যাবে।
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো</em>কে বলেন, আইএমএফের স্টাফ মিশন বিবৃতিতে যা বলেছে, আইএমএফের শর্তই হবে। কোনো নতুন শর্ত আরোপ করার কিছু নেই যদি সরকার এগুলো পূরণ করে বা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, তবে এটি এনহ্যান্সড ফান্ডিং সাপোর্ট (ইএফএফ) থেকে সম্পূর্ণ ঋণ পাবে, অন্যথায় ছোট শর্ত সহ $১৫০ দিয়ে সন্তুষ্ট হতে হবে।
প্রসঙ্গত, আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবার পর দেশের অর্থ খাতে বেশ অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি তার দক্ষ ও সুবিচক্ষণতার সহিত অর্থ খাত পরিচালনা করে বিশেষ অবদান রাখছেন। ভবিষ্যতে দেশের অর্থ খাত আরো অগ্রগতি লাভ করবে এমনটাই আশা দেশের মানুষের।