সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নামকরা একটি গ্রুপ শিল্প সংস্থা একটি ইসলামি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমান অর্থ ঋণ নেওয়ার বিষয় নিয়ে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই গ্রুপ শিল্প সংস্থাটি হলো এস আলম গ্রুপ। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের মালিকের পরিবারের ৭ জন সদস্যের নামে ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে, যেটা ব্যাংক আইন বহির্ভুত। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন। এদিকে জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি সংবাদ নিয়েও তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এস আলম গ্রুপের সম্পদের মূল্যায়নের বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা শাসককে (ডিসি) উদ্ধৃত করে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত সংবাদে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বিস্ময় প্রকাশ করেন। আহমদ কায়কাউস ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তারা আলাদাভাবে বলেন, ‘ডেইলি স্টারের মতো সংবাদপত্রের কাছ থেকে এমন মিথ্যা খবর সংবাদ প্রত্যাশিত ছিল না।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গতকাল দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে টেলিফোন করে বলেছেন- ডেইলি স্টারের খবর পড়ে ‘আই অ্যাম সারপ্রাইজড’। আমি বিস্মিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এমন কোন নির্দেশনা দেননি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককেও (ডিসি) কিছু বলিনি। ডেইলি স্টারের মতো সংবাদপত্র থেকে এমন মিথ্যা খবর কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না।’ এ খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে গতকাল ডেইলি স্টারকে একটি চিঠি (ইংরেজিতে) পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘প্রিয় জনাব সম্পাদক, ৬ ডিসেম্বর ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত ‘এস আলম গ্রুপের সম্পদ অনুসন্ধান কর’ শীর্ষক সংবাদ আমাদের নজরে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের নাম নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত; কারণ এস আলম গ্রুপের সম্পদ খতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ডেইলি স্টার গল্প প্রকাশের আগে মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ডেইলি স্টার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাননি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দেননি। তবুও আপনার পত্রিকা ভুয়া খবর ছাপিয়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক এবং ক্ষতিকর। মনে হচ্ছে তথাকথিত সূত্রের কল্পনা ও বক্তব্যের ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে খবরটি বানোয়াট করা হয়েছে। আমরা আপনার পত্রিকার এ ধরনের মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা আশা করি ডেইলি স্টার ভবিষ্যতের সংবাদ প্রকাশে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য ব্যবহার করবে। দয়া করে আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর প্রতিবাদপত্রটি যথাযথভাবে প্রকাশ করুন। ধন্যবাদ।
এদিকে, কোনো শিল্পগোষ্ঠীর সম্পত্তি বা জমি তল্লাশির জন্য কাউকে লিখিত বা মৌখিক কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গতকাল ডেইলি স্টারের চিফ রিপোর্টার মি পার্থ আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তাকে পরিষ্কার বলেছি, এস আলম কেন, কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ীর বিষয়ে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না। সেটা জমি হোক বা সম্পত্তি। কোনো লিখিত বা মৌখিক নির্দেশ আমাদের কাছে তদন্তের জন্য আসেনি। কেউ দেয়নি, কেউ দেননি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কেউ বলেননি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কেউ কিংবা অন্য কোনো সরকারি দপ্তরকে কোনো গোষ্ঠীর সম্পদ বা কোনো কিছু সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বলা হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো লিখিত বা মৌখিক আদেশ আসেনি। আমরা কাউকে এ ধরনের নির্দেশ দেইনি। ডেইলি স্টার যেমন লিখেছে, তারাই ভালো জানে। কোন জায়গা থেকে তথ্য পেয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও কোনো লিখিত বা মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
গতকাল ডেইলি স্টার পত্রিকায় এ ‘প্রোব এস আলম গ্রুপ অ্যাসেটস পিএম অর্ডারস এমিড এলিগেশন অব ওভারভ্যালুয়েশন অব ল্যান্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ এস আলম পরিবারের ৭ জন সদস্যের ৭ টি ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৪টি ব্যাংকই হলো ইসলামী ব্যাংক। তাদের মালিকানায় একটি বিমা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই শিল্পগ্রুপের নামে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যেটা এখন পর্যন্ত খেলাপী হিসেবে পাওয়া গেছে।