রাজধানী ঢাকাতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেই চলেছে।প্রাণ যাচ্ছে মানুষের আর আহাজারি করছে তাদের পরিবার স্বজনরা অথচ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে দায়িত্ব এড়াতে দেখানো হয় নানা অজুহাত। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নামে মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়।কিছু দিন পর সব ঘটনায় ধামা চাপা পড়ে যায়।কিন্তু হারানো মানুষ গুলো নিয়ে নীবরে কেঁদে যায় পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
রাজউক বলছে বেইলি রোডের পুড়ে যাওয়া ভবনটায় রেস্টুরেন্ট করার অনুমতি ছিল না। ফায়ার সার্ভিস বলছে পুড়ে যাওয়ার আগে তিনবার নোটিশ দেয়া হয়েছিল ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে। কিন্তু বাস্তবতা হল খোদ রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা বেইলি রোডে এই ভবন গতকাল পর্যন্ত রমরমা চলছিল। রাজউক তাহলে কি করল যখন দেখল অনুমতি না নিয়েই রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা চলছিল সেই ভবনে? ফায়ার সার্ভিস তাহলে কি করল ৩ বার নোটিশ দেয়ার পরেও যখন ভবনের কেউ কর্ণপাত করল না? এদের চোখে কি পড়ে নাই ভবনটা? নাকি রাজউক আর ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঐ এলাকা দিয়ে কখনো যাতায়াত করেন না?
এখন যদি ঢাকা শহরের সকল ভবনের সেইফটি সিকিউরিটি তদারকিতে বের হয় কর্তৃপক্ষ তাতেও কি নিশ্চিত হবে যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সব সিলগালা করে দেয়া হবে? নাকি টাকা খেয়ে ছেড়ে দেয়া হবে? ঝুঁকিমুক্ত ভবনকেও যে টাকা খাওয়ার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয়া হবে না তার গ্যারান্টি কি কেউ দিতে পারবে?
পারবে না কারণ সবাই ধান্দাবাজ। উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সবাই ধান্দাবাজ। এই দেশে সর্ব্বোচ্চ মহল থেকে ধান্দাবাজী আর দুর্নীতিকে এমন কাঠামোগতভাবে এস্টাবলিশ করা হয়েছে যে যতই আমরা চাই না কেন ২৯শে ফেব্রুয়ারী (বেইলি রোড), ৩রা জুন (নিমতলি), ২০শে ফেব্রুয়ারী (চকবাজার), ২৮শে মার্চ (বনানী), ২৭শে জুন (মগবাজার), ৪ঠা এপ্রিল (বঙ্গবাজার) ফিরে ফিরে না আসুক, এরকম দিন আসবেই।
12th Fail সিনেমার অজপাড়াগাঁয়ের মনোজ কুমার শর্মার পিসিএস পাশ করে সৎ অফিসার হওয়া দেখে আমরা যতই উজ্জীবিত হই না কেন, আমাদের দেশে এরকম মনোজ কুমার শর্মা আসলে কোনদিন তৈরী হবে না। সিস্টেমই হয় মনোজ কুমার শর্মা তৈরী হতে দিবে না অথবা মনোজ কুমার শর্মা নিজেই সিস্টেমের অংশ হয়ে দুই হাতে টাকা কামাবে। আকাশ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের দুর্নীতি এবং এর কোন বিচার না হওয়ার খেসারত এই জাতিকে ততদিন পর্যন্ত দিতে হবে যতদিন না সিস্টেমকে প্রশ্ন করা হবে, সিস্টেমকে কাঠগড়ায় তুলতে না পারবে সাধারণ মানুষ। নাহলে যে দেশে মুরগীর কাবাবের (গ্রিল) দাম ৩৫০ টাকা, বিফ শিক কাবাব ২৫০ টাকা সেই দেশে মানুষ পুড়ে অথবা শ্বাসনালী পুড়ে কাবাব হয়ে গেলে তার দাম ০ টাকা বৈ আফসোস আর আহাজারি ছাড়া কিছুই হবে না।