সম্প্রতি ভারতে ঘটে গেছে একটি বড় ধরণের ট্রাজেডি। হ্যালোইন পার্টি করতে গিয়ে ঝুলন্ত ব্রিজ চিরে পরে গেছে হাজারো মানুষ। জানা গেছে সেখানে এখন পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ১৪০ জনের বেশি। আর এ নিয়ে এখন সবখানে চলছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। এ নিয়ে এবার একটি বিশ্লেষণাত্মক লেখনী লিখেছেন মঞ্জুর কাদের। পাঠকদের উদ্দ্যেশ্যে তারা সেই লেখনী তুলে ধরা হুবহু:-
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নিজ রাজ্য গুজরাটে সদ্য সংস্কারকৃত সেতু গতকাল (অক্টোবর ৩০, ২০২২) ভেঙে পড়ায় ভারতবর্ষের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরব হয়ে উঠছে।
‘মোদীর বক্তব্য দিয়েই মোদীকে নিশানা তৃণমূলের, পোস্তা সেতু ভেঙে পড়ায় কী বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী?’ শিরোনামে আনন্দবাজার পত্রিকা আজ (অক্টোবর ৩১, ২০২২) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে লেখা হয়েছে:’কটাক্ষের সুরে তৃণমূলের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর ২০১৬ সালের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে আমরা জানতে চাই, গুজরাতের মোরবীর বিপর্যয় কি আসলে ‘অ্যাক্ট অফ ফ্রড?’
গুজরাতে সেতু দুর্ঘটনা নিয়ে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ শানানো শুরু করল তৃণমূল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে করা মোদীর এক সময়কার বক্তব্যকেই হাতিয়ার করল বাংলার শাসক দল। কটাক্ষের সুরে তৃণমূলের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর ২০১৬ সালের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে আমরা জানতে চাই, গুজরাতের মোরবীর বিপর্যয় কি আসলে ‘অ্যাক্ট অফ ফ্রড?’
এই প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব টুইট করে বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে এসে বলেছিলেন, সেতু ধস একটি ‘অ্যাক্ট অফ ফ্রড’।
বিরোধী শাসিত রাজ্যে প্রতিটি ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার অভ্যাস রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
কিন্তু এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্য গুজরাতে। তা হলে মোরবী দুর্ঘটনাও কি ‘অ্যাক্ট অফ ফ্রড’?’’
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘দেশের মানুষ বিজেপির বহুল আলোচিত ‘গুজরাত মডেল’-এর আসল সত্য দেখতে পাচ্ছেন।’’
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময় আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটে বিজেপির একটি সভায় হাজির ছিলেন মোদী। সেই দিনের বক্তব্যের একটি ভিডিয়ো নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল।
কলকাতার পোস্তায় নির্মিয়মান সেতু ভেঙে যাওয়া নিয়ে মোদীর বক্তব্যের ভিডিয়ো পোস্ট করে তৃণমূলের রাজ্যসভার উপদলনেতা সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় টুইটারে লিখেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি এই ঘটনার জন্য চোখের জল ফেলবেন?’’
শুধু এই দুই সাংসদই নন, তৃণমূলের অনেকেই এ নিয়ে সরব হয়েছেন। তৃণমূলের এক রাজ্যস্তরের নেতা বলেন, ‘‘২০১৬ সালে রাজ্য নির্বাচনের আগে উত্তর কলকাতায় পোস্তা সেতু ভেঙে পড়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন যে দুর্ঘটনাটি আসলে ছিল, ‘অ্যাক্ট অফ গড’।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারের সময় যাঁরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের নিয়ে উপহাস করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটি একটি ‘অ্যাক্ট অফ গড’ নয়, বরং ‘অ্যাক্ট অফ ফ্রড’। এখন তো প্রধানমন্ত্রীকে কথা শুনতেই হবে।’’
এই সেতু দুর্ঘটনায় নরেন্দ্র মোদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে আগামী দিনে নাস্তানাবুদ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিবিসি বাংলা আজ প্রতিবেদনে বলেছে যে, গুজরাটে পোস্তা সেতু সংস্কারের কাজ দেয়া হয়েছিল তালাচাবি মেরামত করার কোম্পানিকে যাদের সেতু সংস্কারের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
রাজনীতিতে বিরোধীদলকে আক্রমণ করতে গেলে ভাষা যে ভূমিকা রাখে তা আবার প্রমাণিত হলো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথাগুলোই আবার বুমেরাং হয়ে ফেরত যাচ্ছে তার দিকে।
তাই রাজনীতি অঙ্গনে ভেবে চিন্তে কথাবার্তা বলাই ভালো।
প্রসঙ্গত, এ দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ব্রিজের ঘটনায় সাধারণ জনতা দোষী করছে সরকারকে। ব্রিজের কাঠামো আর সহনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সকলেই। এছাড়াও এই ট্রাজেডির শিক্ষার হয়ে পরিবারগুলোর মধ্যে এখন চলছে শোকের ছায়া।