বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় একটি নাম নুরুল হক নূর। একটা সময়ে তিনি দেশে পরিচিতি পেয়েছিলেন ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর পরিপুর্ন ভাবে যোগদান করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে। আর সেই থেকেই সরকার এর নানা ধরনের সমালোচনা করে যাচ্ছেন এই নেতা।
সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর আওয়ামী লীগকে শান্তিপূর্ণভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে জনরোষে শ্রীলঙ্কার স্বৈরশাসকের মতো শেষ হয়ে যাবে আওয়ামী লীগ সরকার। শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে বরিশাল নগরীর আমতলা এলাকায় বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নূর বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা করে হয়রানি করবেন না। এমন অপচেষ্টা হলে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমি জনগণকে বলব, পুলিশ অন্যায়ভাবে একজনকেও গ্রেপ্তার করলে স্থানীয় জনগণ সবাইকে নিয়ে থানা ঘেরাও করবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত ১৩ বছর ধরে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কয়েকদিন আগে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে দুর্ভিক্ষ আসছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি উন্নয়নের মহাসড়কের কথা বলেছিলেন, এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন কেন? মাত্র ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের জন্য আইএমএফের কাছে ধাওয়া শুরু করেন তিনি। অন্যদিকে ফরিদপুরের এক ছাত্রলীগ নেতা দশ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এই সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট পিকে হালদার দশ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। এভাবে গত ১৩ বছরে ১৪ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে এই সরকারের নেতাকর্মীরা।
নুরুল হক নুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ২৩ বছরের ইতিহাস নিপীড়ন-নিপীড়ন-শোষণের ইতিহাস। আমরা এটাও বলতে পারি, আওয়ামী লীগের ১৩ বছরের গুম-খুন-খুন-চাঁদাবাজির ইতিহাসও নৈরাজ্যের ইতিহাস। আজ বাংলার মানুষ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। গুম ও খুন থেকে মুক্তি চায়। বাংলার মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে চায়।
এমনকি দেশ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে, তখন র্যাব, একটি সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত বাহিনী, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। র্যাব এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে শেখ হাসিনাকে বিনা ভোটে আটকে রাখতে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো বাটপারী নির্বাচন করতে পারবে না। এই সরকার যদি তা করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা তাদের প্রতিহত করব। যে আমার ভোট অন্যকে দেবে সারাজীবন তাকে বিশ্বাস করব না। সরকার গত ১৩ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের মতো আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক বিপ্লব কুমার পোদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও বিভাগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে আমতলা মোড়ের একটি কনভেনশন সেন্টারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে নেতাকর্মীদের জন্য জায়গা না পেলে কনভেনশন সেন্টারের সামনের রাস্তায় হাজার হাজার নেতাকর্মীর উদ্দেশে বক্তব্য দেন নুরুল হক নূর।
প্রসঙ্গত, একটা সময়ে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে উত্থান ঘটে নুরুল হক নূরের। আর সেই থেকেই আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একটা সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন ডাকসুর ভিপি হিসেবে। এরপর থেকেই তিনি বনে গেছেন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ।