রাজধানীর উত্তরায় গতকাল ঘটে গেছে খুব দুঃজনক একটি ঘটনা। সেই ঘটনায় হাতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পার্কিং করা একটি প্রাইভেটের গাড়ির উপর উত্তরায় নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ক্রেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে ভেঙ্গে পড়ে। সেই ঘটনায় প্রয়াত হন রুবেল নামের এক ব্যক্তি। জানা গেছে রুবেলের নিথরদেহ দেখতে এসেছেন ৪ জন স্ত্রী আর তাই নিয়ে শুরু হয়েছে জটিলতা।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার ক্রেন পড়ে প্রাইভেটকারে থাকা শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে পাঁচজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে।অন্যদিকে মর্গের সামনে পরিবারের প্রধান রুবেলের স্ত্রীর সংখ্যা নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মর্গের সামনে বাড়তে থাকে রুবেলের স্ত্রীর সংখ্যা। মর্গের সামনে চার নারী নিজেদের রুবেলের স্ত্রী বলে দাবি করেন।
এ চিত্র আজ মঙ্গলবার ১৬ আগস্ট মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা সেখানে ভিড় করছেন। অনেকে কাঁদছে। এ সময় গণমাধ্যমে কথা হয় রুবেলের স্বজনদের সঙ্গে। সেখানে আলাপকালে রুবেলের চার স্ত্রীকে একে একে পাওয়া যায়। ৩০ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রেহানার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই বাড়ির প্রথম ছেলে হৃদিয়া তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায়।
এদিকে রেহানার জামাই ও রুবেলের শ্যালক রহমত জানান, আমরা শরীয়তপুরে থাকি। আমি জানতাম যে আমাদের রুবেল বাড়ি কেনার ব্যবসা করে। আমরা ঢাকায় তেমন আসিনি। মৃত্যু সংবাদ শুনলাম। শুনেছি সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। অন্যদিকে রুবেলের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম শাহেদা। তার বাড়িতে রত্না নামে ১৪ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায়। ঢাকায় থাকেন উত্তরা।
তবে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহেদা নিজেকে প্রথম স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমি ১৯৯৯ সালে বিয়ে করি। আমি প্রথম। তিনি আমাকে বলেনি তার অন্য স্ত্রী আছে. প্রথম স্ত্রীর আত্মীয় রহমত বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তার একটি মেয়ে রয়েছে বলে শুনেছি। ওই স্ত্রী এর আগে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। ওই বাড়ির একটি ছেলেও আছে। রুবেলকে বিয়ে করেন এক ছেলে। এদিকে রুবেলের তৃতীয় স্ত্রী বলে দাবি করা আরেক নারী হলেন সালমা আক্তার পুতুল। তিনি মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় থাকেন। বাড়িতে সেলাই মেশিনের কাজ করেন। তিনি ২০১৪ সালে রুবেলকে বিয়ে করেন। তিনি জানতেন রুবেল একজন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী। তবে রুবেলের সঙ্গে তার কোনো বিয়ের সনদ নেই।
এদিকে সার্টিফিকেট ছাড়া স্ত্রীর দাবি কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিথ্যা বলে আমাকে বিয়ে করেছেন। আমি জানতাম তার একটাই স্ত্রী আছে। প্রথম বাড়ির বউ অসুস্থ বলে আমাকে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ের পর দেখি আরও অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে। পাতা খন্দকার নামে তার আরেকটি স্ত্রী রয়েছে। আমি তার সাথে কথা বললে সে আমাকে বলে যে আমি আমার কাজিনের সাথে কথা বলছি। পরে আমি প্রতারণার মামলা করি। আমারও একটা মামলা আছে। এমনটাই দাবি করেন তিনি।
এরপর পাতা খন্দকার নামে আরেক স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়। যাকে ২০২০ সালের দিকে রুবেল বিয়ে করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটাই জানিয়েছেন পাতা খন্দকারের ভাগ্নি। এমনকি তিনি বলেন, খালাকে বিয়ে করার আগে ডিবির পরিচয়ে বিয়ে করেছেন। অন্যদিকে পাতা খন্দকার বলেন, অনেক আগেই বিয়ে করেছি। তবে কবে হয়েছে তা স্পষ্ট করে বলেননি। তিনি দাবি করেন, আমি দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাকিরা বাড়িতে কাজ করেন। তারপর তাদের বিয়ে। এই বিয়ের কোন ভিত্তি নেই।
এ সময় পাতা খন্দকার দাবি করেন, রুবেলের পেছনে তিনি এখন পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ করেছেন। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়িটি কেনার সময় তিনি রুবেলকে ৬ লাখ টাকা দেন। মারা যাওয়ার আগেও রুবেল তার বাড়িতে চলে যায়। তার সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক। তিনি দাবি করেছেন যে তিনি তার প্রথম স্ত্রীর বাড়িতেও যাতায়াত করতেন।
এদিকে রুবেলের চার স্ত্রী রয়েছে জানতে চাইলে প্রথম স্ত্রীর আত্মীয় রহমত বলেন, এখন অনেকেই অনেক কথা বলতে আসবে। কিন্তু তাতে কাজ হবে না। আমরা তাদের চিনিও না। আমরা প্রথম বাড়ির আত্মীয়। আমরা সবাই এসেছি। ঘরে আমাদের প্রথম ছেলে আছে। এদিকে বেঁচে যাওয়া প্রথম স্ত্রীর ছেলে হৃদয় জানান, তার জন্ম ১৯৯৫ সালে। অন্যদিকে শাহেদার বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালে। তবে শাহেদা জানতেন না তার আরেকটি স্ত্রী আছে।
প্রসঙ্গত, রুবেলের প্রয়ানের খবর শুনতে পেয়ে একে একে ছুটে এসেছেন রুবেলের স্ত্রীরা। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের রুবেলের স্ত্রী বলে দাবি করছেন। স্ত্রীদের ঘরে রয়েছে সন্তান। স্ত্রীদের কথা শুনে বুঝা যায় রুবেলের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল।