রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর অপারেটিং রুমে (ওটি) দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৭ আগস্ট উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার পর সহকারী ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেন।
ভুক্তভোগী গত ২০ আগস্ট হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিতার স্বজনরা। তবে অভিযোগের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ১৭ আগস্ট অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার পর চিকিৎসকরা চলে যান। তখন ওটিতে একজন পুরুষ ও একজন নার্স ছিলেন। লোকটি নার্সকে কৌশলে বের করে দিয়ে তার শরীরের স্পর্শকাতর অংশে হাত দিয়েছিলেন । পরে নার্স ওটিতে ফিরে এসে বলেন, তাকে কেউ ডাকেনি।
ভিকটিমের খালা বলেন, “ডা. শামীমা হক চৌধুরী ১৭ আগস্ট দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আমার ভাগ্নির অপারেশন করেন।” । অপারেশন শেষে চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণে চলে যান। সেখানে রোগী, একজন পুরুষ এবং একজন নার্স ছিলেন। সেই অবস্থায় আমাদের ভাগ্নি সব শুনছিল এবং অনুভব করছিল। কিন্তু নড়তে পারেননি। লোকটি নার্সকে ফাঁকি দিয়ে ভাগ্নির স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়।
রাত সাড়ে দশটায় রোগীকে কেবিনে দেওয়া হয়। রাত ১টার দিকে ভাতিজি আমাদের এই ঘটনার কথা জানায়। সকালে ভাইয়েরা এলে বলবেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতাল পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তারা তদন্ত করেছে। যে এই কাজ করেছে, তার ছবিও দেখাল। ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন ভাগ্নি।
ছাত্রীর খালা আরও বলেন, গত ২০ আগস্ট রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। আমরা বলছিলাম, আপনারা বিচার না করলে আমরা যাব না। আমার ভাইয়েরা হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে গেলে তিনি বলেন, তারা দুই দিনের মধ্যে বোর্ডে বসে ব্যবস্থা নেবেন।
কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন না। বরং তারা কৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ি ফেরার পর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার রোগীকে বারবার ফোন করে নার্ভাস করার চেষ্টা করছেন।
পরে আরেকজন নার্স আমাকে ডেকে বললেন, ওই লোকটি গরীব, তার চারটি সন্তান রয়েছে। লোকটার চাকরি চলবে কী করে? একপর্যায়ে নার্স বলেন, আমরা তাকে জরিমানা করলে তিনি দিতে রাজি আছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমি চাই ওই ব্যক্তির কঠোর শাস্তি হোক, সে যেন অন্য কারও সঙ্গে এমন কাজ করতে না পারে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি হাসপাতালের ওটি সহকারী। রুহুল আমিন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. রুহুল আমিন বলেন, “হাসপাতালে নির্বাচনের দুই গ্রুপ রয়েছে- নজরুল-মন্টু প্যানেল ও রোকেয়া-শাহিদা প্যানেল। আমি নজরুল-মন্টু প্যানেলে নির্বাচন করেছি। এ কারণে প্রতিপক্ষ দল আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই মিথ্যা অভিযোগ করেছে। ‘ তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগের পর বিভাগীয় প্রধান ওটি ইনচার্জের মাধ্যমে মৌখিকভাবে আমাকে ডিউটি বন্ধ করতে বলেন।’
জানা যায়, অভিযোগের পর হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে হাসপাতালের উপ-পরিচালক মেজর (অব.) ডা: মো. অভিযোগের বিষয়ে ড. মোঃ হাফিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, “এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। রোগীর বাইরে কিছু বলতে পারছি না।”
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা: মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে তিন দিন যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তার চেম্বারে গেলেও তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।