রাজধানী ঢাকায় গতকাল ঘটে গেছে মর্মান্তিক একটি ঘটনা। আর এই ঘটনায় এখন শোকাহত পুরো দেশ। গতকাল রাজধানীর উত্তরায় জসিমউদ্দিন সড়কে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই শিশু ও একজন নারী। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুজন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহত হন। তাদের মধ্যে দুই শিশু ও দুই নারী রয়েছে।
এ সময় রেজাউল করিম হৃদয় (২৬) ও রিয়ামনি (২১) আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন হৃদয়ের বাবা রুবেল হাসান (৫০), রিয়ার মা ফাহিমা (৪০), রিয়া খালা ঝর্ণা (২৮), ঝর্ণার মেয়ে জান্নাত (৬) ও ছেলে জাকারিয়া (৩)।
ঘটনার তিন ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উল্টে যাওয়া গাড়ি থেকে গার্ডারটি সরানো হয়। এরপর গাড়ি থেকে একে একে মরদেহগুলো বের করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিআরটি প্রকল্পের জন্য নির্মিত গার্ডারগুলো ক্রেন দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসময় হঠাৎ গার্ডারটি রাস্তায় ছুটে চলা প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। গার্ডারটি ক্রেন থেকে উড়ে যায়নি, বরং ক্রেনের একপাশে উল্টে গেছে।
দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকার থেকে হতাহতদের বের করা সম্ভব হয়নি। প্রাইভেটকারটি গার্ডারের নিচে চাপা থাকায় লাশ উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। পরে এক্সকাভেটর দিয়ে গার্ডার সরিয়ে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা জোন-৩ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক সাইফুজ্জামান জানান, দেড়শ টন ওজনের গার্ডার থাকায় উদ্ধার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। পরে এক্সকাভেটর আনা হয়। এক্সকাভেটর আনতে দেরি হওয়ায় উদ্ধারকাজে বিলম্ব হয়। তিন ঘণ্টা পর এক্সকাভেটর দিয়ে গার্ডার তুলে প্রাইভেটকার থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
হৃদয়ের চাচাতো ভাই রাকিব (১৯) জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা দুর্ঘটনার খবর পান। কিন্তু এত সময় পেরিয়ে গেলেও গাড়ি থেকে লাশ বের করতে পারেনি উদ্ধারকারীরা। ভিতরে কেউ বেঁচে থাকলে এতক্ষণে মরে গেছে।
রাকিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ধরনের অব্যবস্থাপনায় সরকার কীভাবে কাজ করছে? আমরা কার বিচার করব! অন্তত লাশগুলো বের করা হোক। কিন্তু এখানে কোনো উন্নত যন্ত্রপাতি নেই।
প্রসঙ্গত, এ দিকে এই ঘটনা নিয়ে এখন শোকের হাওয়া বইছে পুরো দেশে। বিশেষ করে ঘটনার সাথে জড়িত পরিবার গুলোর আহাজারী এখন ভারি করে দিয়েছে দেশের আকাশ বাতাসকে।