এখন পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনায় ঠিক কত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, তা হয়তো কেউই বলতে পারবে না। কিন্তু যাদেরকে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়েছে, একমাত্র তারাই বলতে পারবে অন্তিম মুহূর্তটা তাদের কাছে কেমন ছিল। আর এরই জের ধরে সেই সুন্দরী রূপ বিশেষজ্ঞ তথা ইনস্টাগ্রাম প্রভাবী বুরকু সাগলামের মৃত্যুতে এখনো যেন কাঁদছে সবাই।
প্রাইভেট জেটে করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বুরকু সাগালাম। বিমানটিতে আগুন ধরে যায় এবং মাটিতে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই বুরকুর মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যুর আগে ক্যামেরায় বন্দি করেন তার শেষ মুহূর্তগুলো। মৃত্যুর সময় বুরকুর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। তিনি তুরস্কের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর তুরস্কের সাকারিয়া প্রদেশের পামুক্কালে থেকে বুরকু এবং পাইলট হাকান কোকসাল (৫৪) বেলা ৩:৩০ টার দিকে বিমানে ওঠেন। বিমান উড্ডয়নের আগের মুহূর্তের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফ্লাইট শুরুর ২০ মিনিট পরে, পাইলট প্লেনে একটি যান্ত্রিক সমস্যা লক্ষ্য করেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বুরসা প্রদেশের ওসমানগাজির ওভাক্কা প্রাকৃতিক গ্যাস সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের একটি উঁচু তারে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে জেট বিমানের একটি ডানা।
এর পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানটি সোজা মাটির দিকে নামতে শুরু করে। এরপর বিমানটি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয়। বুরকু ও হাকান মারা যান। তবে মৃত্যুর আগে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে অনুগামীদের শেষ বার্তা দিতে ভোলেননি বুরকু। ঘটনার ঠিক আগে বুরকু-এর ইনস্টাগ্রাম থেকে আপলোড করা হয়েছিল এই সেলফি ভিডিও। শেষ ভিডিওতে অনুগামীদের উদ্দেশ্যে বুরকুর শেষ বার্তা ছিল, “আমি ইনস্টাগ্রামকে চিরতরে বিদায় জানাচ্ছি।” ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা “বিদায়”।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়ি ছাড়ার আগে বুরকু তার বাবা-মাকে বলেছিলেন যে তিনি চাকরি খুঁজতে বাইরে যাচ্ছেন। মৃত্যুর খবর না পাওয়া পর্যন্ত তারা জানতেন না মেয়েটি বিমানে কোথাও যাচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা ভিডিওটির সময় দেখে পুলিশের ধারণা, মৃত্যু অনিবার্য জেনে বুরকু নিজেই এই ভিডিও আপলোড করেছেন। এ কারণেই তিনি এমন ছোট বার্তা দেওয়ার সময় পান।
কর্তৃপক্ষের তরফে ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দল জানিয়েছে, মাটি থেকে প্রায় ১২০০ মিটার উচ্চতায় বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওসমানগাজীর প্রাকৃতিক গ্যাস প্লান্টের কাছে একটি খালি জায়গা থেকে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল। ঘটনাস্থলের কাছে বুরকু ও হাকানের মৃতদেহও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
এদিকে বুরসার মেয়র দেশটির এক সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘হঠাৎ এমন কি কারণে ওই বিমানটি ৩ লক্ষ আশি হাজার ভোল্ট লাইনের উপর দিয়ে উড়ছিল, তা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে খুতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এ ঘটনায় বুরকু সাগলামের মৃত্যুতে এখনো কাটেনি শোকের রেশ।