বুধবার সকাল ৮টা। ওই সময় হাত-পা ভাঙা ও মাথার চুল কাটা অবস্থায় উঠানে পড়েছিলেন স্বপন। ওই সময় স্বপন বারবার বলছিল, ‘এ সুমি আমাকে পানি দে রে, আমারে হাসপাতালে নিয়ে যা, আমি বাঁচে যাবনে।’
ঘণ্টাখানেক পর স্বপনের মৃত্যু হয়। প্রতিবেশী কামালের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে। এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে।
নিহতের নাম স্বপন আলী চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। সুমি খাতুন জালাল মোড় এলাকার আসাদ শেখের স্ত্রী।
জানা গেছে, স্বপন ও সুমি চাচাতো ভাই-বোন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ প্রেমের জের ধরে চাচাতো ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে উঠোনে ফেলে রেখে যায়।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয় লোকজন সেখানে ভিড় জমায়। কিন্তু আসাদ ও এর আশপাশের বাড়িতে লোকজন নেই। লাশের পাশে রান্নাঘরের চুলায় খিচুড়ি রান্না করছে প্রেমিকা। চুলার পাশে ডিম আর সবজি। রাস্তার পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত স্বপন আলীর বাবা আব্দুর রশিদ।
তিনি জানান, ভাতিজি সুমির সঙ্গে স্বপনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সুমি তার ছেলেকে কুমারখালীর শ্বশুর বাড়িতে ডেকে নেয়।
প্রতিবেশী কামালের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন বলেন, “মারধরের খবর শুনে সকাল ৮টার দিকে গিয়ে দেখি অনেক লোক। স্বপন আলী উঠানে পড়ে আছে। বারবার বলছে, ‘এ সুমি আমাকে পানি দে রে, আমারে হাসপাতালে নিয়ে যা, আমি বাঁচে যাবনে।’ ঘণ্টাখানেক পরে গিয়ে দেখি মারা গেছে, আর সুমি রান্না করছে।
স্থানীয় কালু শেখ জানান, রাতে আসাদের বাড়িতে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে চিৎকারের শব্দ শুনতে পান তিনি। সকালে তিনি একটি লাশ দেখতে পান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, খবর পেয়ে চুলায় খিচুড়ি রান্না হচ্ছে দেখতে গিয়েছিলেন। আর লাশ পড়ে আছে উঠোনে।
আসামি সুমি খাতুনের ভিডিও জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। ভিডিওতে তিনি জানান, রাত ২টার দিকে স্বপন তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানালা ধরে টানাটানি করছিলেন। সে সময় তার ভাসুর শহিদুলসহ স্থানীয়রা তাকে মারধর করে উঠানে ফেলে রেখে যান। তিনি সকালে স্বপনের বাড়িতে খবর দিয়ে রান্না করছিলেন। তবে তার ভাষ্য, স্বপন তাকে পছন্দ করতেন। এ নিয়ে অতীতে অনেকবার সালিশ হয়েছে।
কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে আসাদের বাড়ির আঙিনা থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত যুবকের মাথায় ও শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।