ড. কামাল হোসেন যিনি গণফোরামের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন, তিনি বলেন নির্বাচনী ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পরেছে এবং সেই সাথে হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএম মেশিনের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন এই মেশিনের মাধ্যমে ১৫০ টি আসনে নির্বাচন গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে, যেটা দেশের জন্য কোনরকম কল্যাণকর কিছু হবে না বরং এটা একটা ভ’য়াবহ অশুভ সংকেত এই ধরনের শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে আজ বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পেতে চায়।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে গণফোরাম আয়োজিত বর্তমান রাজনীতি বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল বলেন, “দেশ বর্তমানে গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত, কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকারের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস-তেল-ডিজেলের দাম নিয়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অদূরদর্শিতা এবং লু’টেরাদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা আজ চরমে।সাধারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খু”ন, গু’ম, নারীদের খারাপ কাজ করা ও বিরোধী দলের দ”মন, মিথ্যা মামলা ইত্যাদির কারণে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকারের একটি অংশ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দেশের তহবিল রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতার কারণে কৃষক-শ্রমিকেরা টাকা বাঁচাতে পারছে না। টেলিফোন বিভাগ তহবিলে ৩,০০০ কোটি টাকা জমা করেনি। সকলের উচিত এই রাষ্ট্রকে বাঁচানো।’
গণফোরাম সভাপতি বলেন, “রাষ্ট্রে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থ পাচার হচ্ছে। রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় তহবিল রক্ষায় জনগণের ঐক্যই পূর্বশর্ত।
তিনি আরও বলেন, ‘বড় শক্তিশালী দলগুলো জাতীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে মা”স্তান ও কালো টাকা ব্যবহার করে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা সাধারণ নাগরিক একক সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই আমরা এই শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারি না বা তাদের কাছে জিম্মি থাকতে পারি না। আমরা মা”স্তান ও কালো টাকার জিম্মি থেকে নিজেদের মুক্ত করব, যাতে আমরা সম্মিলিতভাবে প্রকৃত জাতীয় উন্নয়নের কর্মসূচি হাতে নিতে পারি। এই জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচি মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও উন্নয়নে সহায়তা করবে। এটি বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়াবে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।”
ডক্টর কামাল হোসেন বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে সকলের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাব। অন্যদিকে যে অপশক্তিগুলো মা”স্তান ও কালো টাকা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের সমগ্র সমাজকে পতনের চেষ্টা করছে, তারা পিছু হটবে। আমরা জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করছে শুধু অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য নয়, তাদের পরাজিত করে সত্যিকারের গণতন্ত্রের জন্য এগিয়ে যাওয়ার জন্য।এই কালো শক্তি, মা”স্তান ও কালো টাকা থেকে আমাদের মুক্ত করার সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো সত্যিকারের একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। .
সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল। সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতি ও ড. মোঃ মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে গণফোরামের ১০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকে বসার কথা বললেও কয়েকটি দল এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবস্থার বিপক্ষে কথা বলেন। কিন্তু তা সত্বেও ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা এবং সে সম্পর্কে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন, যার কারণে প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশনসহ কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।