Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ইসিকে দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ, এখন কী করবে ইসলামী আন্দোলন?

ইসিকে দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ, এখন কী করবে ইসলামী আন্দোলন?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ‘আওয়ামী টুর্নামেন্টের দলদাস রেফারি’ এবং পুরো নির্বাচন কমিশনকে ‘ফেলুয়া’ বলে অভিহিত করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটি গণসমাবেশ করে ১০ নভেম্বরের মধ্যে জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আল্টিমেটাম দেয়। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করেনি। জাতীয় সরকার গঠিত হয়নি। এরই মধ্যে তফসিল ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসিকে দেওয়া আল্টিমেটাম শেষ, এখন কী করবে ইসলামী আন্দোলন? জানতে চাইলে দলটির একাধিক নেতা জানান, একই দাবিতে সক্রিয় অন্যান্য দলের শান্তিপূর্ণ যুগপৎ আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও ও রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি।

রোববার (১২ নভেম্বর) নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দলটি। সেখানে নতুন কর্মসূচি ঠিক করা হবে। এরপর দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা ঘোষণা করবেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এর আগে গত ৩ নভেম্বর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম ভোটাধিকার ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত বলে আলটিমেটাম দেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় তিনি সরকারকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে কারারুদ্ধ বিএনপিসহ সব শীর্ষ নেতাকে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, সরকার এসব দাবি মেনে না নিলে, আন্দোলনরত সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক যুগ্ম মহাসচিব কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমির পীর চরমোনাই এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের শান্তিপূর্ণ চলমান কর্মসূচিতে সমর্থন ঘোষণা করেছেন। দলের পক্ষে আমির নির্বাচন কমিশনকে যে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তা তারা মানেননি। তারা পদত্যাগ করেনি বা জাতীয় সরকার ঘোষণা করেনি।

তিনি উল্টো তফসিল ঘোষণার তোড়জোড় বন্ধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, জনগণকে বেকায়দায় ফেলে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের জেলে ভরে সরকার যদি মনে করে এবারও পার পেয়ে যাবেন, সেটা এবার সম্ভব না। সেটা এবার করতে দেওয়া হবে না। নতুন কঠোর কর্মসূচিতে আমরা যাচ্ছি।

আল্টিমেটাম শেষ, কিন্তু নতুন কী কর্মসূচি আসছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে নামতে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নেতারাও যোগাযোগ করছেন। চলতি সপ্তাহেও নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। যুগপৎ আন্দোলনের মতো কর্মসূচিও দেব। তবে অন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যোগ দেবে নাকি আলাদা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনো কর্মসূচি চূড়ান্ত নয়। তবে এসব বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা আসছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, আমরা এখনো যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিইনি। তবে একই দাবিতে সমমনা ও আন্দোলনকারী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সমর্থন করেছি। রবিবার আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। শুধু এটুকু বলতে পারি কঠোর কর্মসূচি আসছে। সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশের পর দলের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। আমির পীর চরমোনাই যে আল্টিমেটাম দিয়েছেন সেটি নির্বাচন কমিশন মানেনি। আমরা আর আল্টিমেটাম দেবো না। সরাসরি কঠোর কর্মসূচিতে যাবো। অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়।

তিনি বলেন, আগামী দিনে নিরপেক্ষ জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকার পতনের জন্য পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে দলের বিভিন্ন স্তর থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামীকাল নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।

বর্তমান সময় তফসিল ঘোষণার জন্য মোটেও অনুকূল নয়, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই।

শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ২টায় পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও দলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

তিনি বলেন, দেশের তুমুল সংঘাতপূর্ণ ও অস্থিরতায় নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে মরিয়া।

তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল আন্দোলন করেছে। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না করে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে তা ঠিক না করে তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। সম্প্রতি দুটি উপনির্বাচনে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশ্যে সিল মারার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়েছে। কেন্দ্র দখল করে, পেশিশক্তি প্রয়োগ করে এবং ভীতিকর পরিবেশে নির্বাচন করে জাতীয় নির্বাচন মোমোর সাহস হয় কীভাবে? তাই তফসিল ঘোষণা না করে সিইসির পদত্যাগ করা উচিত।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী নির্বাচন জাতীয় সরকারের অধীনে করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে একতরফা নির্বাচনের তফসিল সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে না। আন্দোলনকারী দল ও দেশবাসী এই তফসিল মানে না। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এমতাবস্থায় একতরফাভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে চরম বুদ্ধিহীনতা।

যুগপৎ আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলনকে চায় জামায়াত। জামায়াতে ইসলামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো আল্টিমেটাম মানছে না সরকার। সরকারকে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হঠাতে হবে। এজন্য চলমান আন্দোলনে যুক্ত করতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে যুগপৎ কিংবা সমন্বিত আন্দোলনে চায় জামায়াতে ইসলামী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, যুগপৎ আন্দোলন চলছে। চলমান আন্দোলনে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দল নিজ নিজ দলীয় অবস্থান থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এরই মধ্যে চলমান আন্দোলনমুখী কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়েছে। আমরা আশা করি তারা একই সময়ে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।

তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। আপাতত আগামীকাল থেকে দুই দিনের অবরোধ থেকে আমাদের দলীয় কর্মসূচি আবার শুরু হচ্ছে। এটি শেষ হওয়ার পরে আমরা নতুন প্রোগ্রাম দেব। এটা যুগপৎ আন্দোলন হবে নাকি সমন্বিত কর্মসূচি হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।

About Nasimul Islam

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *