বাংলাদেশের এখন টক অব দা টাউন একটাই আর টা হলো ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা পাচারের কুকীর্তি জেনে গেছে সবাই। বিশেষ করে ভুয়া ঠিকানা ও কাগজের কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা উত্তোলন এবং এস আলম গ্রুপ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনায় প্রবাসীরা এখন আতঙ্কিত।
এ দিকে ইসলামী ব্যাংকগুলোর প্রতি প্রবাসীদের আলাদা আস্থা ও বিশ্বাস থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। একের পর এক প্রতারণা। দেশের টালমাটাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে মালিকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকগুলো।
ইসলামী ব্যাংকের ভেতরে আসলে কী হচ্ছে? সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও তদন্তে বসেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অর্থ বিভাগকে বলা হয়েছে ব্যাংকের ভেতরে আসলে কী হচ্ছে তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে।
এরই মধ্যে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা আনোয়ার তার প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। মালিকানা পরিবর্তনের ছয় বছর পর তিনি ইসলামী ব্যাংকের ২২৬ হাজার ৩৩২টি শেয়ারের প্রায় সবকটি শেয়ার পুঁজিবাজারে বিক্রি করে দেন। ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তার মাত্র ৩৩২টি শেয়ার রয়েছে।
সূত্রমতে, অধিকাংশ সূচকে অনেক আগেই দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গেছে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। শুধু আমানতের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বেশি আমানত ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের হাতে। কিন্তু বিদায়ী বছর শেষে ইসলামী ব্যাংকের কাছে আমানতের শীর্ষস্থান হারিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ২০২১ সালের শেষে ইসলামী ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। দেশের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকের আমানত সোনালী ব্যাংকের চেয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। আর তা বেসরকারি খাতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমানত রাখা পূবালী ব্যাংকের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
তবে ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের আমানত নিয়ে চিন্তিত প্রবাসীরা। দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনলাইনে ক্রমাগত সংবাদে বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ফলে শ্রমঘন দেশগুলোর প্রবাসীরা তাদের টাকা ব্যাংকে ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। এমন ভয়ের কারণে অনেকেই ঋণের কিস্তি ও সংসারের খরচ ছাড়া টাকা পাঠান না। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে পরিবারের খরচ মেটাতে দেশের ব্যাংকে জমা টাকা খরচ করার কথা বলছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষিত প্রবাসীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব বিভ্রান্তিকর ভিডিওতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রবাসী সৌদি আরব থেকে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স কমেছে। একই অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, কাতারের প্রবাসীদের ক্ষেত্রেও। মালয়েশিয়া ও ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এমন অপপ্রচারের শিকার।
প্রসঙ্গত, এ দিকে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে এখন নড়েচড়ে বসেছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইতিমধ্যেই এই ব্যাংকটি থেকে সরে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। যা হয়তো আর কোনোদিন আসবে না ফেরত। আর এই সব কারণে দেশের আমানত রাখার একটি বড় অংশ এখন পড়ছে ব্যাপক বিপদে।