বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে সরকার বিভিন্ন দ্রব্য আমদানির ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। এদিকে ব্যাংকগুলো অনেক বিষয়ে নীতিমালায় নতুন কিছু পরিবর্তন এনেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আর্থিক খাত নিয়ে বেশ কিছু খবর প্রচার হচ্ছে। সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক থেকে বেনামী ঋণ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ পেয়েছে যেটা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা।
ইসলামী ব্যাংকের বেনামী ও জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন এমডি মনিরুল মাওলা। তিনি বলেন, আমরা ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ পোর্টফোলিও আমরা ধারণ করি । তাই ৪০ বছর ধরে পরিচালিত এ ধরনের একটি ব্যাংকে এ ধরনের অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। একটা সিস্টেম আছে, এই সিস্টেমের মধ্যেই সব হয়। এখানে বেনামি ঋণ বলে কিছু নেই, শুধু নামেই আছে।
ইসলামী ব্যাংকে কোনো সংকট নেই বলেও দাবি করেন তিনি। মনিরুল মাওলা বলেন, একটি চেকও ব্যাংক বাতিল করেনি, হবেও না। আর গ্রাহকদের আস্থাও কমেনি। তিনি উল্লেখ করেন, নেতিবাচক খবর থাকলেও এ কারণে আমানত কমার পরিবর্তে বেড়েছে। বরং খাদ্য আমদানি ও দাম বাড়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন খাতে ব্যাংক বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ১২ শতাংশের বেশি। আর দেশের মোট আমানতের ১০ শতাংশ ব্যাংকে জমা হয়েছে। যার পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি।
শিল্প ও বাণিজ্যিক ঋণ ছাড়াও ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রেও ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মনিরুল মাওলা বলেন, উদ্যোক্তা তৈরির পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বড় শিল্পে বিনিয়োগ করেছি। বাণিজ্যিক ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও আমরা ক্ষুদ্র অর্থায়নও করি। বাংলাদেশের প্রায় ৩০ হাজার গ্রামে এই কার্যক্রম চলছে। এই মুহূর্তে ১.৬ মিলিয়ন গ্রাহক রয়েছে। এদের মধ্যে ৯২ শতাংশই নারী। তারা নিজেদের তারা নিজেদের সাবলম্বী করছেন এবং জিডিপিতে অবদান রাখছে।
ইসলামী ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রবাসীদের প্রায় ৩০ শতাংশ রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে আসে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ব্যাংকটির বিশেষ অবদান রয়েছে।
মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা বলেন, আমরা সবসময় রেমিটেন্স কিভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিয়েছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এদেশ থেকে রেমিটেন্সের ৫২ শতাংশ আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর সারাবিশ্বের হিসেবে করলে এই মুহূর্তে তা ২৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমান কমে যাওয়ায় আর্থিক বিষয়টি নিয়ে অনেকে অতিমাত্রায় বিশ্লেষন করা শুরু করেছেন, যেটা বাস্তবের নিরিখে ভিন্ন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন তারল্য সংকট একটি ভিন্ন বিষয় যেটার কারণে আমানতকারীরা কোনো ধরনের সমস্যায় পড়বেন না। তবে বৈদেশিক রিজার্ভ কমে যাওয়ায়, বৈদেশিক লেনদেনে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা।