শনিবার ঘড়িতে দুপুর ১২টা। গুলশান ২ , রোড ১১১। ৮ নম্বর রাজবাড়ির আশেপাশে কিছু লোক জড়ো হয়ে আছে। ওই রাস্তা দিয়ে যারা যাচ্ছিল, তাদের সবার কৌতূহলী চোখ বাড়ির দিকে। চারতলা ভবনের ছাদে টানানো হয়েছে সৌদি আরবের পাঁচটি পতাকা। ভেতরে নিস্তব্ধতা। গেটের বাইরে থেকে ঘরের ভেতরে উঁকি দিলে চোখ আটকে যায় সুন্দর সুইমিং পুলের দিকে। সামনের রাস্তায় র্যাবের কয়েকটি গাড়ি। একটি অ্যাম্বুলেন্স সহ। বিতর্কিত ব্যবসায়ী আদম তমিজি হকের প্রাসাদ বাড়ি এখন খবরে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফেরার পর গুলশানের ওই বাড়িতেই অবস্থান করছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার র্যাব প্রথমে তাকে গ্রেফতার করতে ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে গ্রেফতার এড়াতে ওইদিন ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যার হুমকি দেন হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আদম তমিজি হক। গত শুক্রবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে আরেকটি ঘটনা ঘটান তিনি। তামিজি নিজেকে ইহুদি বলে দাবি করে। বললেন, আমার নাম আদম। আমার জন্ম ব্রিটেনে। আমার মা অর্ধেক ইহুদি। ইসরায়েল সরকারের কাছে নাগরিকত্ব দাবি করে তামিজি বলেন, ‘আমি একজন জিউস।’ তমিজিও তার দাড়ি ছেঁটে ফেলেছে, পরিচিত ঝাঁঝালো চেহারাকে পেছনে ফেলেছে। যদিও কিছুদিন আগে সৌদি আরবের মক্কা থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি বলেছিলেন, আমি ধর্ম ও ব্যবসার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। চতুর্থ বিয়ে। আর সৌদি আরবে করাই ভালো। কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত তাকে প্রকাশ্যে বাড়ির বাইরে দেখা যায়নি। তবে বিকেলে তমিজির কোম্পানীর লোকজন তার জন্য বাড়ির ভেতরে নানা রকমের খাবার পাঠায়।
সেই বাড়ির সামনে। কথা হয় তাহের নামে এক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ৬ -৭ বছর ধরে স্যারের সঙ্গে আছি। প্রাইভেট অফিসার হিসেবে কর্মরত। র্যাবের অভিযানের পর আমি বাসা থেকে বের হই। চতুর্থ স্ত্রীকে নিয়ে ঘরের মধ্যেই আছেন তিনি। ফেসবুক লাইভে এলে শুধু স্যারের স্ট্যাটাস দেখতে পাই। অন্য সময় ফোনে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। তবে শনিবার সকাল থেকে ফোন বন্ধ। দুপুরের পর বাড়ির ভেতরে গিয়ে ফল, জুসসহ বিভিন্ন খাবার রেখে এসেছি। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়নি। আমরা তার মামলা নিয়েও কাজ করছি।
ওই বাড়ির সামনে হক গ্রুপের আরও দুই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি, তবে তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা জানান, কোম্পানিতে কাজ করেও দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। অনেকক্ষণ ধরে আবোলতাবোল কথা হচ্ছে স্যার। এ কারণে কোম্পানির পুরোনো লোকজনও তার ওপর ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ তমিজিকে বিদেশে থাকার পরামর্শও দিয়েছেন। তাদের কথা না শুনেই দেশে ফিরে তমিজি স্যার বারবার বলতে থাকেন। তাদের মতে, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।
হক গ্রুপের কর্মকর্তারা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, গুলশানের ওই বাড়িতে তমিজির চতুর্থ স্ত্রী ছাড়াও একজন দেহরক্ষী ছিলেন। দেহরক্ষীও একজন ব্রিটিশ নাগরিক। শুক্রবার গুলশানের ওই বাসা থেকে বের হন তিনি।
তমিজির বাড়ির পরিস্থিতি তুলে ধরে একজন বলেন, ওই বাড়িতে বেশ কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে। সমস্ত কক্ষের দরজা সুরক্ষিত। আঙুলের ছাপ না মিললে সেখানে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। অভিযানের পর বাড়ি থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। গতকাল বিকেলে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তমিজির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তিনটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা করেছেন তার স্ত্রী। তার বাড়িতে তল্লাশি পরোয়ানা রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। আত্মহত্যার হুমকি দেয়। স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ঘরের জানালার কাচ ভেঙ্গে ফেলে। অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টি করে গ্রেফতার এড়ানো। নজরদারি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে গ্রেফতার করা হবে।