দীর্ঘদিন প্রেমের পর গত বছরের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ইলিয়াস হোসাইনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম আলোচিত তারকা নাসিরের সাবেক প্রেমিকা সুবাহ শাহ হুমায়রা। তবে দাম্পত্য জীবনের মাত্র কয়েকদিনের মাথায় যৌতুকের অভিযোগ দিয়ে গায়ক ইলিয়াস হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা করে সুবাহ।
তবে মামলা দায়েরের কয়েক মাসের মাথায় এবার উল্টো সুর তুললেন সুবাহ। ইলিয়াসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন তিনি।
রোববার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক আবেরা সুলতানা খানমের আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এ জন্য আদালতে সাক্ষ্য দেন সুবাহ। এ সময় সুবাহ বিচারককে মৌখিকভাবে ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করবেন না বলে জানান। সুবাহ আদালতে বলেন, “আমাদের দুজনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আমি আর এই মামলা চালাতে চাই না। আমি মামলা প্রত্যাহার করতে চাই।
এরপর আসামি ও বাদীর উপস্থিতিতে মামলা প্রত্যাহারের শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন বিচারক।
এদিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে গত ৩ জানুয়ারি বনানী থানায় মামলা করেন সুবাহ। চলতি বছরের মার্চে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একমাত্র আসামি হিসেবে পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক মাসুমা আফ্রাদ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলায় ১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এরপর ১৯ মে চার্জশিট গ্রহণ করেন আদালত। গত ১৯ জুন আসামি ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাসুমা আফ্রাদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সুবাহ একজন অভিনেতা এবং আসামি ইলিয়াস একজন গায়ক। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের পরিচয় হয়। পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রেমের সম্পর্ক। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর ইসলামি শরিয়া মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় আসামি ইলিয়াসের দাবি অনুযায়ী ১২ লাখ টাকা মূল্যের একটি রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের আরেকটি ঘড়ি, ১ লাখ টাকার একটি সোনার আংটি, গলার চেইন ৫০ হাজার টাকা এবং বিয়ের জন্য ২ লাখ টাকা জামাকাপড় যৌতুক হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে ইলিয়াস সুবাহের কাছে একটি ফ্ল্যাট কিনতে ৫০ লাখ টাকা এবং গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে।
এছাড়া ইউটিউব চ্যানেল কেনার জন্য সুবাহার মায়ের কাছে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এরপরও ইলিয়াসকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সুবাহ জানতে পারে অভিযুক্ত ইলিয়াস একাধিক বিয়ে করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলিয়াস সুবাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এরপর ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর আসামি ইলিয়াস আরও ৮০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে ইলিয়াস গ্লাস ভেঙ্গে তার ভাঙ্গা টুকরো দিয়ে সুবাহকে মা/র/তে যায়। সুবাহ তাকে বাধা দিতে গেলে তার বাম হাতে আঘাত লাগে। পরে বিষয়টি নিয়ে ইলিয়াস সুবাহের কাছে ক্ষমা চান এবং সুবাহকে প্রতিশ্রুতি দেন এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।
পরদিন ২৮ ডিসেম্বর ইলিয়াস আবার সুবাহর কাছে ৮০ লাখ টাকা দাবি করেন। এতে সুবাহ অস্বীকৃতি জানালে ইলিয়াস এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি, লাথি মারেন এবং চুলের মুঠি ধরে দেওয়ালের সঙ্গে ঠুকে জ/খ/ম করে। সুবাহ অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
মেডিকেল সার্টিফিকেট থেকে জানা যায় যে সুবাহকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে এবং সামান্য আঘাত করা হয়েছে। তদন্তকালে ইলিয়াসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু সহিংসতা প্রতিরোধ আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ১১(সি) ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
সে সময়ে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই মুহুর্তেই ভাইরাল হতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে দুজনের মধ্যে ঝগড়ার বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়।