ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর ‘আয়নাঘর’ নামক বন্দিশালা থেকে বহু বছর আটক থাকা অনেক বন্দি মুক্তি পান। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায় যে বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে সেখানে জীবিত পাওয়া গেছে। কিন্তু পরে নিশ্চিত হয়, ইলিয়াস আলীকে গুমের পর হত্যা করা হয়েছে।
সিলেটের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে হত্যা করে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বাধীন একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’। হত্যার পর তার লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই গুম ও হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র্যাবের সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেন।
সোমবার দৈনিক “আমার দেশ” পত্রিকায় এই নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানের করা প্রতিবেদনে ইলিয়াস আলী গুম ও হত্যার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
জবানবন্দিতে তাহেরুল জানান, জিয়াউল আহসানের নির্দেশে তিনি শেরাটন হোটেল থেকে ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করেন। মহাখালীতে পৌঁছে জিয়াউল নিজে আরেকটি টিম নিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ি বনানীর ২ নম্বর সড়কে থামিয়ে তাকে এবং তার ড্রাইভার আনসারকে অপহরণ করেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গুম তদন্ত কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তে জানা যায়, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত র্যাবের দুই সদস্য এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তারা হলেন ওয়ারেন্ট অফিসার জিয়া ও ইমরুল। তাদের ক্লোজড ও অন্তরীণ করা হয়েছে।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে শেরাটন হোটেলে একটি বৈঠকের পর ইলিয়াস আলীকে তার বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ করা হয়। অপহরণের পর তাকে হত্যা করে যমুনায় ফেলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনার প্রমাণ পেয়েছে গুম তদন্ত কমিশন। কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার আমলে এমন বহু গুম ও হত্যা সংঘটিত হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা এই ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে নাটক করেছিলেন, যা ইলিয়াস আলীর পরিবারের কাছে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
এই প্রতিবেদন গুম ও হত্যার ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে।