নোবেল শান্তি পু/রস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে মন্তব্যে করে আলোচনায় থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) ইমরান আহমেদ ভূঁইয়ার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।তিনি এ পদে থাকতে পারবেন না, বাধ্য করা হবে তাকে পদত্যাগে করতে- এমন প্রশ্ন এখন বিভিন্ন মহলে আলোচনায় আসছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, তিনি (ইমরান) শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’ অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ বক্তব্য দিয়েছেন।’
সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত মানুষ। তার মানহানি হচ্ছে এবং এটা বিচারিক হয়রানি। ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে তাকে সই করতে বলা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে তিনি স্বাক্ষর করবেন না, ‘…এটি আমার নিজস্ব মতামত। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং শতাধিক মানুষের বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল তার দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
তদন্ত করে জানা যায়, এমরান আহমদ ভূইয়ার বক্তব্যে তার সহকর্মীরাও বিব্রত। তারা বলছেন, ছুটির কারণে হাইকোর্ট বন্ধ রয়েছে। কেন তিনি নিজেই ছুটির দিনে প্রেসের জন্য নির্ধারিত ডায়াসে উৎসাহী এসেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। এর পেছনে রয়েছে ভিন্ন উদ্দেশ্য। এদিকে সরকারের নীতির বাইরে কথা বলায় মঙ্গলবার বিকেলে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পঞ্চম তলার ৫১১ নম্বর কক্ষ থেকে এমরান আহমেদ ভূঁইয়ার নামফলক খু/লে ফেলা হয়।
এ প্রসঙ্গে আরেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্র এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে ডেপুটি অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখবেন। কিন্তু রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।তাই আমার মনে হয় তার নামফলক অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে থাকতে পারে না।তাই আমি তার নামফলক সরিয়ে দিয়েছি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইমরান আহম্মদ ভূঁইয়া নিজেই পদত্যাগ করুক- এটাই সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা। তা না হলে শিগগিরই তার নিয়োগ বাতিল করা হবে। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় রয়েছেন। তিনি ৪৩তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পর সিঙ্গাপুর যাবেন। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে হাইকোর্টে রাষ্ট্রের পক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২১৩ জন আইন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে একজন অ্যাটর্নি জেনারেল, তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৬১ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৪৮ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রয়েছেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা রিটেইনার ফি হিসেবে সুবিধা ভোগ করে।
অ্যাটর্নি জেনারেল একটি সাংবিধানিক পদ। অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান, সাধারণ আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারকে আইনি পরামর্শ প্রদান করেন। সরকারের পক্ষে আদালতে হাজিরা দেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে সরকারের আইন উপদেষ্টাও বলা হয়। তিনি মাসিক ১ লাখ ৫ হাজার টাকা (সবকিছু) রিটেইনার ফি ভোগ করেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মাসিক রিটেনার ফি পান ৯৫ হাজার ৬০০, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ৯১ হাজার এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ৮১ হাজার টাকা ফি পান।