Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ইমরানকে ডেকে নেয়া নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশ্যে যা বললেন সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি

ইমরানকে ডেকে নেয়া নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশ্যে যা বললেন সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি

সদ্য বরখাস্ত হওয়া ডিএজি এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে মার্কিন দূতাবাসে স্থান দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এমরান আহমদ ভূঁইয়া সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বারের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন,ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) সাব-সিকোয়েন্ডলি গেছেন। আমাদের বক্তব্য হলো তাকে আমেরিকান দূতাবাসে জায়গা দেওয়া ঠিক হয়নি। কারণ, আপনি এবং আমি এদেশের নাগরিক। আপনি-আমরা কি এপয়েন্টমেন্ট ছাড়া যেতে পারি? আপনি-আমরা যেতে পারবো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া? কেন তাকে ডেকে নেয়া হলো। কোন উদ্দেশ্যে তাকে ডেকে নিয়েছে? পরিবারসহ, বাচ্চা-কাচ্চাসহ। কেন?

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি বলেন, তিনি (এমরান আহমেদ ভূঁইয়া) নিজ উদ্যোগে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে গিয়েছিলেন। সে তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে গেছেন। কারও প্রেশারে বা কারও কারণে যাননি। কোনো ভয়-ভীতিতে তিনি এ কাজ করেননি, সেটা তিনি নিজেই বলেছেন।

তবে তাকে মার্কিন দূতাবাসে জায়গা দেওয়া ঠিক হয়নি। কেন তার পরিবার মেয়েদের নিয়ে সেখানে গেল? এটা ছিল একেবারে পূর্বপরিকল্পিত, এটা প্রমাণিত। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, যেসব শ্রমিক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, ওই শ্রমিকরা একটি কোম্পানির। এবং কোম্পানির মালিক কে? গ্রামীণ টেলিকমের মালিক কে? শ্রমিকের মালিক ডাঃ ইউনুস। আর মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন শ্রমিকরা। এখানে সরকার বা কারো করার কিছু নেই। তারা আইএলওর নিয়ম অনুযায়ী মামলা করেছে। তাই বিদেশিদের দেওয়া বক্তব্যে তথ্যের ফাঁক রয়েছে, সে কারণেই তারা এই বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে। মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, বরখাস্ত ডিএজি এমরান যে বক্তব্য দিয়েছেন- তা পুরোপরি আইনের লঙ্ঘন। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে থেকে এ ধরনের বিবৃতি তিনি দিতে পারেন না। উনি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাদের (সাংবাদিকদের) ডেকে নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তার ইনটেনশনটি খারাপ ছিল। বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য এটা করেছেন। ইতিমধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিনি (এমরান আহমদ ভূঁইয়া) বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্যই না। তাই তাকে নতুন করে বরখাস্ত করার প্রশ্নই আসে না।

আজ দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবিতে বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৫১০ জন আইনজীবী পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিদাতাদের অধিকাংশই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল (এএজি) এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক এডভোকেট নূরে আলম উজ্জ্বল, কোষাধ্যক্ষ এম মাসুদ আলম চৌধুরী, বারের সাবেক সম্পাদক এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ড. মোহাম্মদ জগলুল কবির, ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক প্রমুখ।

লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন দেশের একাধিক নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের লেখা খোলা চিঠি আমাদের নজরে এসেছে। চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাকে আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য সুস্পষ্ট হুমকি হিসেবে বিবেচনা করি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের শাসন অনুযায়ী আইনের চোখে সবাই সমান। কোনো সভ্য দেশে কেউ অপরাধ করলে সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে- এটা স্বতঃসিদ্ধ। ইউনূসের ক্ষেত্রে আমরা ড. খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিদেশি নাগরিকরা অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের স্বার্থকে এড়িয়ে গেছেন। ইউনূসের স্বার্থ রক্ষায় একটি বিবৃতি জারি করেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনিচ্ছাকৃত।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের শাসন অনুযায়ী আইনের চোখে সবাই সমান। কোনো সভ্য দেশে কেউ অপরাধ করলে সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে- এটা স্বতঃসিদ্ধ। ইউনূসের ক্ষেত্রে আমরা ড. খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিদেশি নাগরিকরা অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের স্বার্থকে এড়িয়ে গেছেন। ইউনূসের স্বার্থ রক্ষায় একটি বিবৃতি জারি করেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনিচ্ছাকৃত।

আমরা যতদূর জানি, জনাব ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২/১টি মামলা ছাড়া বাকি সবগুলোই তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা দায়ের করেছেন। আমরা সূত্রে জানতে পেরেছি, একজন কারখানা পরিদর্শক মো. ইউনূস ও অন্যদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ৪(৭)(৮) লঙ্ঘনের দায়ে ঢাকায় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন। অধ্যাপক ইউনূস ও অন্যান্য আসামিরা হাইকোর্ট বিভাগে দুটি ফৌজদারি বিবিধ মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার কার্যক্রম চললেও হাইকোর্ট বিভাগ দুটি মামলাই খারিজ করে দেন। জনাব ইউনূস হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ছুটির আবেদন করলে মহামান্য আপিল বিভাগও উক্ত আবেদনটি খারিজ করে দেন এবং হাইকোর্ট বিভাগের রায় বহাল রাখেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ড. ইউনূসের মামলার কার্যক্রমে রায়ের আলোকে মামলার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আদেশের পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে অত্যন্ত জঘন্য কাজ করেছেন বিদেশি নাগরিকেরা। অনুরোধটি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি তাদের অসম্মান প্রদর্শনের শামিল, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একটি স্বাধীন বিচার বিভাগে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের বিচারিক প্রক্রিয়া প্রত্যাহার, স্থগিত বা হস্তক্ষেপ করার কোনো আইনি সুযোগ নেই। উপরন্তু, আইএলও এবং জাতিসংঘের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী হিসেবে বাংলাদেশ অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও গুরুত্বের সাথে প্রাসঙ্গিক সকল বিধান অনুসরণ করে।

উল্লেখ্য, উল্লিখিত চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তা লক্ষাধিক প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অবমাননা-যা আমাদের সচেতন ও বিবেকবান নাগরিক হিসেবে ব্যথিত করেছে। আমরা আশা করি সম্মানিত বিদেশী নাগরিকগণ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে জনাব ইউনূসের পক্ষে তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবেন।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *