দেশ জুড়ে আলোচনায় থাকা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম হলো ইভ্যালি, যেখানে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা দেওয়ার পর তাদের পন্য সরবরাহ করেননি কিংবা তা আর ফেরৎ পাননি। ইভ্যালি কান্ডের পর সরকার ব্যবস্থা নেওয়া বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ২১৪ কোটি টাকারও বেশি পেমেন্ট গেটওয়ে গুলোতে আটকে রয়েছে। ভোক্তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের কর্মদিবসের দিনগুলোর যেকোনো দিন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা পরিশোধ শুরু করবে বলে জানা গেছে। ই-কমার্স সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি গত ২ ডিসেম্বর টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এক বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিন মাসের মধ্যে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেবে সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল বাণিজ্য আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ গঠন সংক্রান্ত উপকমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে যেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই তাদের নামে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া এর মধ্যে পণ্য ডেলিভারি না হলে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ভোক্তাদের টাকা ফেরত দেওয়া যে্তে পারে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা করে ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়নসংক্রান্ত উপকমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। টাকা ফেরতের বিষয়টি একটি বড় ইস্যু হয়ে গেছে। তাই নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গত জুলাই মাস থেকে যাঁদের টাকা আটকে আছে, সেগুলো যেন তাঁদের ফেরত দেওয়া হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিসের মহাব্যবস্থাপক মেজবাউল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসংক্রান্ত একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছে। এতে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, এসক্রো সার্ভিসে সেসব প্রতিষ্ঠানের নামে আটকে থাকা অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মেজবাউল হক আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আশা করেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ভোক্তার টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হতে পারে। তবে এর আগে প্রতিষ্ঠান থেকে ভোক্তাদের পণ্য পাওয়া না-পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সুত্র জানায়, মামলা নেই এমন প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের জন্য ভালো খবর। মামলা আছে, এমন প্রতিষ্ঠানের টাকাই এসক্রো সার্ভিসে আটকে আছে। ফলে টাকা ফেরত পাবে এমন গ্রাহকের সংখ্যা খুব বেশি হবে না। তবে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও বাংলাদেশ ব্যাংক জানাতে পারেনি।
এর আগে গেল ২৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স খাতে থাকা সকল পক্ষ নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, গেল ১ জুলাই হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত এসক্রো সর্ভিসে যে সকল গ্রাহকের টাকা আটকে আছে তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। আগামী তিন মাস ধরে এই কাজ চলমান রেখে তাদের টাকা দেওয়া শেষ করা যাবে বলে আশা করেন তারা।
এসক্রো সর্ভিসের নীতিমালা গেল ৩০ জুন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১ জুলাই হতে যেসকল লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে সেইগুলোর বিপরীতে আটকে রাখা হয়েছে। যে পণ্যগুলি বিতরণ করা হয়নি, অর্থ পেমেন্ট গেটওয়েতে সেই সকল টাকা আটকে রয়েছে। তাই সে ক্ষেত্রে গ্রাহক ও টাকার পরিমাণ চিহ্নিত করা হয়।