আগামী ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে অনেক আসনে। তবে ইভিএম মেশিন এর মাধ্যমে ভোট কারচুপি সম্ভব, এমনটাই দাবি করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এদিক থেকে ইভিএম মেশিনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের দাবি যেহেতু এটি সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত সেহেতু এই ডিভাইসের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করা সম্ভব। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হলে গ্রহনযোগ্যতা সম্ভবপর নয় এমনটাই জানান তারা।
সুশাসনের নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) একটি নিকৃষ্ট যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, আমার কাছে বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা। নির্বাচন কমিশন তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করে আইন-কানুন বিধি-বিধান প্রয়োগের মাধ্যমে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে চুনোপুঁটিদের ক্ষেত্রে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের আইন প্রয়োগ করেছে, রাঘব বোয়ালদের ক্ষেত্রে তারা আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আত্মসমর্পণ করেছে। নির্বাচন কমিশন আত্মসমর্পণ করলে নাগরিকরা যাবে কোথায়। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাররা বেশ কিছু বিষয়ে পরস্পরবিরোধী ও অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তাদের শপথ ভঙ্গ করেছে বলে আমরা আশ/”ঙ্কা করছি।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানানো হয়।
সুজন বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের বেড়াজাল ছিল। ইভিএম নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছিল ৬টি আসনে আর ২৯৪টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল পেপার ব্যালটে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী ২৯৪ আসনে যেখানে পেপারব্যালটে ভোট হয়েছে, সেখানে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে যে ছয় আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানে ভোট পড়েছিল ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ ৩০ শতাংশ পার্থক্য, তার মানে যেখানে পেপার ব্যালটে ভোট হয়েছে সেখানে কারসাজি করা হয়েছে, না হয় যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেখানে মানুষকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইভিএম যদি জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাহলে সেই ইভিএম ব্যবহারের যৌক্তিকতা কী? ২০১৭ সালে কুমিল্লায় পেপার ব্যালটে ভোট পড়েছিল ৬৪ শতাংশ। এবার সেখানে ভোট পড়েছে ৫৯ শতাংশ। ইভিএমে ভোট দেওয়ার সময় বায়োমেট্রিক ছাপ না পাওয়ায় অনেকেই বিরক্ত হন। এখানে ইভিএম জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, সফ্টওয়্যার দ্বারা চালিত যে কোনো ডিভাইস ম্যানিপুলেট করা যেতে পারে। যারা প্রোগ্রামিং করেন তারাও কারসাজি (ভোট ডাকাতি) করতে পারেন। আবার, যেহেতু নির্বাচন কর্মকর্তাদের ওভাররাইট করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তারাও কারসাজি করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা এই ইভিএম একটি নিকৃষ্ট ডিভাইস, এটি প্রতিষ্ঠিত। পেপার না থাকার ইভিএমে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য আমাদের মেনে নিতে হবে। ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে এর পেছনে থাকা ব্যক্তির বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
সরকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বেশিরভাগ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে, এমনটাই জানা গেছে এবং সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে ইভিএমের সংখ্যাও বাড়ানোর কথা বলা বলেছে। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম মেশিনকে একটি ভোট কারচুপির মেশিন হিসেবে অভিহিত করেছে। বদিউল আলম সেই সাথে সুর মিলিয়ে ইভিএম মেশিনকে একটি নিকৃষ্ট যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছেন।