রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার সুমন পারভেজ রিপন (৩০) প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার রাজশাহীর তিনটি হাসপাতাল-ক্লিনিকে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে চাননি। পরে সামাজিক সংগঠনের এক নেতার পরামর্শে মুখ ঢেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সুমন পারভেজ রিপন শুক্রবার বিকেলে এ তথ্য জানান। তবে যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা দেয়নি এবং মুখ ঢেকে কোথায় চিকিৎসা করা হয়েছে, সেগুলোর নাম জানাতে চাননি সুমন। তিনি বলেন, ‘আমি এমনিতেই বিপদে পড়েছি। সবাইকে জড়িয়ে বিপদ বাড়াতে চাই না। তিনি বিচার দাবি করে বলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। বিচার না পেলে হাসপাতালের সামনে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সুমন পারভেজ নগরীর বসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার মা পিয়ারা বেগম (৬০) সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) রোগে ভুগছেন। এ জন্য তাকে ২ ফেব্রুয়ারি রামেক হাসপাতালের ৪৯ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বুধবার বিকেলে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সুমনকে তাদের কক্ষে ডেকে দরজা বন্ধ করে এবং পরীক্ষা দেখে বকাবকি করায় সুমনকে মারধর করে। রিপোর্ট
এ ঘটনার পর নিরাপত্তা সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার চিকিৎসা না করেই পিয়ারা বেগমকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যান স্বজনরা। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আলমগীর হোসেন ও ফরহাদ হাসান নামে দুই ইন্টার্ন চিকিৎসককেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সুমন পারভেজ নগরীর বোসপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর মা পিয়ারা বেগম (৬০) সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) রোগে আক্রান্ত। এ জন্য ২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে রামেক হাসপাতালের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। বুধবার দুপুরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখাকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডার জেরে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাঁদের কক্ষে ডেকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে সুমনকে বেধড়ক পেটান।
পরে রাজশাহীর এক সামাজিক সংগঠনের নেতার পরামর্শে মুখ ঢেকে অন্য হাসপাতালে যাই। সেখানে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন নেতা নিজেই। পরে ভর্তি হলাম। আমার শরীরের অবস্থা দেখে ডাক্তার বললেন, এগুলো মারধরের চিহ্ন। আমি তখন বলেছিলাম, পারিবারিক বিবাদে আমাকে মারধর করা হয়েছে। এভাবেই আমরা মিথ্যা বলে চিকিৎসা করি। পরে মনে হলো ডাক্তাররা আমার পরিচয় জেনে গেছে। সেজন্যই এসেছি।’
সুমন জানান, গতকাল রাতে হাসপাতালে ভর্তির পর এক্স-রে করা হয়। বুকের ডান পাশের একটি হাড় নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে একদিনে চার হাজার টাকা বিল হয়েছে। কিছু লোকের কাছ থেকে ধার নিয়ে এই বিল পরিশোধ করেছেন। এরপর আদেশ ফরম লিখে আজ বিকেলে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে সুমন বলেন, আমি থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমি মাকে হাসপাতাল থেকে আনতে চলে যাই। কোন অভিযোগ করা হয়নি. আমার মা এখনও অসুস্থ। তীব্র শ্বাসকষ্ট আছে। আজও বাড়িতে নেবুলাইজার দেওয়া হয়েছে। আমি নিজেও অসুস্থ। তাই অভিযোগ করতে যাননি। আমি অবশ্যই অভিযোগ করতে চাই.
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেছে। এ ঘটনার বিচার চাই। বিচার না পেলে হাসপাতালের সামনে আত্মহত্যা করব। কারণ আমি কোনো অপরাধ করিনি। কর্তৃপক্ষের সাহস থাকলে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করুন। তারা এটা করছে না। আমার দোষ হলে তারা ফুটেজ প্রকাশ করত।
তিনটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সুমনের চিকিৎসা না হওয়ার সমালোচনা করে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, “চিকিৎসা করা মানুষের মৌলিক অধিকার। ডাক্তাররা সুমনকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এই ঘটনাও। সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার।যারা চিকিৎসা নেননি তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হোক।না হলে ভবিষ্যতে এমন হবে।বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাবে।’
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা স্বাধীনতা মেডিকেল কাউন্সিলের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. চিন্ময় কান্তি দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, কোনো হাসপাতাল-ক্লিনিকে সুমনের চিকিৎসা হয়নি, তাদের নাম বলতে হবে। নাম প্রকাশ না করে এ ধরনের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। আমি জানি না সুমনের আসলে কি হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি তার সাথে আচরণ না করে, তবে তা ঠিক নয়। কারণ, শত্রু হলেও তার চিকিৎসা করতে হবে। এটি ওষুধের নৈতিকতা।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহমেদ বলেন, বুধবার মারধরের ঘটনার পর আবাসিক সার্জন সুমনকে চিকিৎসা দেন। তাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার ক্ষত কাপড় পরানো হয়। এক্স-রেও দেখা গেল। পরে তাকে পরোয়ানা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুমনের শারীরিক অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হতো।’