রাজধানীর ঢাকার নাম করা কলেজ ইডেন কলেজ। রাজনীতির দিক থেকে বড় একটি ঐতিহ্য রয়েছে এই কলেজটির। তবে গেল কয়েক দিন ধরেই এই কলেজেই চলছে বেশ বড় ধরনের অস্থিরতা। কলেজের ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা নিজেদের মধ্যে শুরু করেছে নানা ধরনের গন্ডগোল। এবার এ নিয়ে একটি লেখনী লিখেছেন সাইয়েদ আব্দুল্লাহ। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু ;-
অনেককেই দেখতে পাচ্ছি ইডেন কলেজের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে হাসিতামাশা করছেন। তাদের উদ্দেশ্য একটা কথাই
বলব— স্টপ ইট, জাস্ট স্টপ ইট। ইটস্ নট অ্যা ম্যাটার অব ফান। এতটুকু বোঝার ক্যাপাসিটি আপনাদের থাকা উচিত।
সে’ক্স’ স্লেভারির মত ভয়ংকর অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে,আর আপনারা সেটার সেনসিটিভিটি নিয়ে কথা না বলে উল্টো হাসিতামাশা শুরু করেছেন!এই অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়ে থাকে, তার মিনিং দাঁড়ায় ইডেন কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ফোর্সড প্র’স’টি’টি’উ’শনে’র সাথে জড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
তারা হয়ে উঠেছে সে’ক্স স্লে’ভা”রির ভিকটিম। টু সাম এক্সটেন্ট তারা ধ’র্ষ’ণে’র’ শিকার।ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর যে অভিযোগটা উঠেছে সেটা হল— আর্থিক অবস্থা খারাপ, ঢাকায় অন্য কোথাও থাকার জায়গা নাই বিধায় হলে থাকতেই হবে এমন সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করা হয় প্রথমে। তারপর তাদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ও জোরপূর্বক বাধ্য করে পাঠানো হয় সংগঠনের বড় বড় নেতা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের শয্যাসঙ্গী হতে। এভাবেই ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের নেত্রীরা টাকা ইনকাম করেন।
আরও একটা কথা বলে রাখি, এইযে অভিযোগ উঠেছে এটা কিন্তু মোটেই নতুন কিছু নয়। ২০১০ সালেও তৎকালীন ছাত্রলীগ নেত্রীদের নামেও এমন অভিযোগ উঠেছিল। সেগুলো পত্রপত্রিকাতেও এসেছিল। তার কোন সুরাহা তখনও করা হয়নি। আর এখনও করা হচ্ছেনা।ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ প্রেসিডেন্ট রিভার একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয় গত ২০ আগস্ট।সেখানে মেয়েদের হলে পলিটিক্যালি সিট বাণিজ্য নিয়ে রিভা কয়েকজন ছাত্রীকে হুমকি দেয় যে সিট নিয়ে ইভেন কলেজের অধ্যক্ষও তার কিচ্ছু করতে পারবেনা। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
“এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ছিঁড়ে ফেলব” এই হুমকির অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে যায়।অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর পাবলিকলি ক্ষমা চায় সে ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে।মানে ওই অডিও রেকর্ড যে তারই ছিল, সেটা সে স্বীকার করে নিয়েছিলো। যারা ওই অডিও ফাঁস করেছিল বলে রিভার মনে হয়েছিল, ওইঘটনার চারদিন পর ইডেন কলেজের এমন ২ শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা রুমে আটকে রেখে নি’র্যা’ত’ন করে রিভা।নির্যাতনের সময় সে ওই দুই শিক্ষার্থীকে বি’ব’স্ত্র করে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।(সূত্র: ডেইলি স্টার, ২৪ আগস্ট,২০২২)
রিভার লাস্টের ওই হুমকিটা লক্ষ্য করুন। বি’ব’স্ত্র করে ভিডিও করে ভাইরাল করে দিবে সে।এবার একটু মিলিয়ে নিন–জোরপূর্বক মেয়েদের জিম্মি করে সে’ক্স’ স্লেভারিতে বাধ্য করার যে অভিযোগ উঠেছে রিভার বিরুদ্ধে, এই অভিযোগটার সাথে তার ওই হুমকিটা কিন্তু
সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মানে এভাবেই যে মেয়েদের নির্যাতন করে জিম্মি করে তারপর তাদেরকে হুমকিধামকি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করে নেয় রিভার মত ছাত্রলীগের নেত্রীরা, এটা অনুমান করাটা অস্বাভাবিক কিছু না।
এখন, আইনি একটা ব্যাপার বলি। মেয়েদেরকে যদি এইভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে কিংবা প্ররোচনা করে এইভাবে অন্যদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করা হয়, তাহলে এই কাজটা স্পষ্টতই ধর্ষণ, আর ধর্ষণের শাস্তি মৃ’ত্যু’দ’ণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড।ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টটা হল, যদি ইডেনের ছাত্রলীগের নেত্রীরা সত্যিই এইকাজ করে থাকে, তার মানে হল তারা ধ’র্ষ’ণের’সহায়তাকারী।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,২০০০ এর ৩০ নং ধারা মোতাবেক ধর্ষণের সহায়তাকারী এবং প্ররোচনাকারীর শাস্তি হবে ধর্ষকের শাস্তির অনুরূপ, মানে তার শাস্তিও মৃ’ত্যু’দ’ণ্ড অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে যা সর্ব্বোচ্চ শাস্তি। ওদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মাত্রাটা চিন্তা করে দেখেন এইবার। একটু ভাবেন তো এটা কি হাসিতামাশা করার মত ব্যাপার?
মেয়েগুলোকে পড়াশোনা করার জন্য বাড়ি থেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিল বাবা-মা। তারা পড়াশোনা করতে এসে টাকার অভাবে বাইরের কোন মেসে থাকতে পারেনা ইচ্ছা হলেও।ছাত্রলীগের এসব নেত্রীদের দ্বারা শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারা প্রতিনিয়ত। তাদেরকে ফোর্সড প্র’স’টিটি’উ’শ’নে পর্যন্ত বাধ্য করা হচ্ছে। এসব কথা শুনে আপনারা প্রতিবাদ করা বাদ দিয়ে, জিম্মি হয়ে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার পরিবর্তে যারা উল্টো হাসিতামাশা করছেন,আর যাই হোন না কেন, অন্তত একজন মানুষ হওয়ার যোগ্য না আপনারা কোনমতেই — রিড দিজ লাইন এগেইন!
প্রসঙ্গত, এ দিকে গেলো কয়েকদিনের অস্থিরতার কারনে ইডেন এর বর্তমান অবস্থা তৈরী হয়েছে রণক্ষেত্রে। জানা গেছে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে এই ঘটনার দোষী হিসেবে দল থেকে করা হয়েছে বরখাস্ত।