বেকারত্ব দেশ ও জাতির উন্নয়নের প্রধান বাঁধার কারন। বিশ্ব জুড়েই এই সংকট বিদ্যমান। তবে বিশ্বের অনেক দেশই এই সংকট নিরসনে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এই সংকট মোকাবিলায় বিশেষ ভাবে কাজ করছে। তবে বাংলদেশে বর্তমান সময়ে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে এই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে এবং আর্থিক ভাবে স্বাবলন্বী হওয়ার লক্ষ্যে নানা ধরনের দিন মুজরের পেশা বেছে নিচ্ছে শিক্ষীত বেকাররা। সম্প্রতি এমনকি এক বেকার ব্যক্তির গল্প উঠে এসেছে প্রকাশ্যে।
কখনও দিনমজুরি, কখনও রিকশাচালক, আবার কখনও রঙমিস্ত্রির কাজ করে মায়ের স্বপ্নপূরণে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন বাবুল বিশ্বাস (২৭)। কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড জটিলতায় মেলেনি কোনো চাকরি! বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হয়েও অবশেষে বেছে নিয়েছেন রঙমিস্ত্রির পেশা। বাবুল বিশ্বাস পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বৃ-রায়নগর গ্রামের মৃ/ত শওকত বিশ্বাস ও শুকজান বেগম দম্পতির ছোট ছেলে। বাবুল বিশ্বাস বলেন, মৃ/ত্যু শয্যায় মা বলেছিলেন— ‘বাবা, আমার কোনো ছেলেমেয়ে পড়াশোনা জানে না। তোমাকে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। চাকরি করে সংসারের অভাব ঘোচাতে হবে।’ সেই সময় মাকে কথা দিয়েছিলাম। এর কিছু দিনের মধ্যে মারা যান মা। মায়ের কথা রাখতে দিনমজুর, কখনও রিকশা চালিয়ে; আবার কখনও রঙমিস্ত্রির কাজ করে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছি। শিক্ষিত হওয়ার কারণে এলাকার অনেকেই কাজ দিতে চান না। তবু মানুষের কাছে আকুতি করে কাজ জোটাতে পারলেও যা আয় করি সেটি দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য বারবার আবেদন করেও কোনো সুরাহা হয়নি। গড়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা উপার্জনে অতিকষ্টে সংসার চালান তিনি। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার (বিএসসি) হয়েও স্ত্রী মাসুদা খাতুন নীলাকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বাবুল। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সাত বোন এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট বাবুল বিশ্বাস। ছোটবেলায় মা/রা যান বাবা। অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েদের লালনপালন করেন মা শুকজান বেগম। তবে তিনি অভাবের কারণে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা শেখাতে পারেননি। তবে বাবুলের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন তার মা। এর মধ্যে ভাইয়েরা সবাই আলাদা হয়ে যান। মায়ের দায়িত্ব পড়ে বাবুলের ওপর। সংসারে জেঁকে বসে অভাব। বন্ধ হয়ে যায় বাবুলের লেখাপড়া। বাধ্য হয়ে দিনমজুরি পেশা বেছে নেন তিনি।
এদিকে ওই সময় ভোটার লিস্টে নাম তোলার জন্য গ্রামে মাইকিং করা হয়। কিশোর বাবুল এবং তার মা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ভোটার লিস্টে নাম লেখান। সেখানে কোনো কাগজপত্র ছাড়াই মুখের কথায় নাম, ঠিকানা এবং বয়সের কথা বলে ভোটার তালিকায় নাম ওঠান বাবুলের মা। এর কিছু দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়েন মা শুকজান বেগম। শয্যাশায়ী মা মৃ/ত্যু/কালে ছোট ছেলে বাবুলকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কথা বলেন। মাকে দেওয়া কথা রাখতে গিয়ে চার বছর বিরতি শেষে নবউদ্যোমে পড়ালেখা শুরু করেন তিনি। ২০১১ সালে এসএসসি পাস করেন বাবুল। এর পর পাবনায় একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। সেখানে পাস করার পর চলে যান ঢাকায়। চাকরি খুঁজতে শুরু করেন বাবুল। কিন্তু চাকরি না পেয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন। পাশাপাশি সেখানে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে টেক্সটাইল বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সম্পন্ন করেন। আবারও হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন চাকরি। কিন্তু ভোটার আইডি কার্ড এবং সনদপত্রে জন্ম তারিখ মিল না থাকায় চাকরি না পেয়ে গার্মেন্টকর্মী হিসেবে চাকরি নেন। এর মধ্যে গার্মেন্টে চাকরির সময় বিয়ে করেন বাবুল।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে সর্বশেষ দেড় বছর আগে আবেদন করেও সুরাহা হয়নি। ভোটার আইডি কার্ড এবং সার্টিফিকেটে জন্ম-সাল না মেলায় কোথাও চাকরির আবেদনও করতে পারছেন না তিনি। অন্যদিকে ক/রো/না/কালে চাকরি হারিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন বাবুল। হতাশ বাবুল পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে বেছে নেন রঙমিস্ত্রির পেশা। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বাবুলের পরিচয় এখন তিনি রঙমিস্ত্রি! ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, বাবুল নামে ওই ছেলেটার জন্য কষ্ট হয়। ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্টে পড়ালেখা করেছে বাবুল। মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ হয়েছে তার। তবু মায়ের ইচ্ছাপূরণে শেষ পর্যন্ত প্রকৌশলী হয়েছে। এখন তাকে রঙমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতে হয়। ভোটার কার্ড জটিলতায় ছেলেটার ভবিষ্যৎ অন্ধকারের পথে। ছেলেটার যোগ্য সম্মানটুকু পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি এ মুহূর্তে ট্রেনিংয়ে আছি। বিষয়টি না দেখে বলা যাচ্ছে না। তাকে অফিসে আসতে বলবেন। তার আবেদন কোন ক্যাটাগরিতে আছে বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশে শিক্ষার হার এবং মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি এতে করে দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষীত ব্যক্তিদের সংখ্যা। তবে দেখা দিয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব। এতে করে দেশে মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষীত বেকারের সংখ্যা। অবশ্যে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিরলস ভাবে কাজ করছেন। এবং এই সকল বেকারদের উদ্যেগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক্ষেত্রে বেকার সমজাকে উদ্যেগী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার গ্রহন করেছে নানা ধরনের পদক্ষেপ। এবং প্রদান করছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।