সম্প্রতি ড. ইউনুসকে নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা রকম বাজে মন্তব্য করছেন। অথচ তিনি পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষের মধ্যে একজন। এদেশের গর্ব কিন্তিু বর্তমান সরকার তাকে হয়রানি করতে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যা কখনো দেশের মানুষের কাছে প্রত্যাশিত নয়।বিষয়টি নিয়ে সা/মাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ/কটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বি/শিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল হু/বহু পাঠকদের জন্য নি/চে দেওয়া হলো।
ইউনুস কী করেছে?
ভদ্রলোক একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক৷ আমার সামনে এসেই বলা শুরু করলেন, ‘ইউনুস একটা সুদখোর! তার জন্য একশ নোবেল বিজয়ী মুর্খ -বাটপার বিবৃতি দিয়েছে৷ এর কোন মূল্য আছে?’
বললাম, আপনিও ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন৷ আপনারও কজন আত্মীয় ব্যাংকার বলে গর্ববোধ করেন৷ ওনারা কি সুদখোর? আমার জানার দরকার ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কি? {ওনিও যে সুদে টাকা লাগান সেটা আর বললাম না৷}
— ওনার জন্য বিশ্বব্যাংক ঋণ দেয়নি, ট্যাক্স মেরে খেয়েছে৷
বললাম, ‘এরও প্রমাণ দেন৷ আমিও ইউনুসের বিরোধীতা করি৷’ ওনি গজগজ করতে করতে চলে গেলেন৷
নব্বইর দশকে শুনতাম, ইউনুস এতো কিছু করলে দেশের উন্নয়ন নাই কেন? যখন ক্ষুদ্রঋণ একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করে দেশের উন্নয়নই ঘটাতে ভূমিকা রাখলো তখনও একটি শ্রেণি কিন্তু ইউনুসকে গালি দেয়া বন্ধ করলো না৷ বাংলাদেশে একজনই নোবেল পেয়েছেন৷ নোবেলের মূল্যটা বুঝতে পারার কথা না৷ অন্ধের দেশে চশমার গল্প বলে লাভ নেই৷ পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক শ্রেষ্ঠ মানুষকে গালিগালাজ করা বাঙালির পক্ষেই সম্ভব৷ অমর্ত্য সেনও গালির শিকার হচ্ছেন৷
আমি অসংখ্য লোকের কাছে জানতে চেয়েছি, ‘ইউনুসের অপরাধটা কী?’ অপ্রমাণিত দুএকটা অভিযোগ ছাড়া কিছু কেউ বলতে পারে না। শেষে বলে, ‘আসলে রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরোধীতা করতে হয় বলে করি।’ মনে হয় না তার তেমন অপরাধ আছে।
ফ্রাঙ্কফুট বইমেলায় ইউনুসের প্রকাশিত একটি আত্মজীবনী পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন, ইংল্যান্ডের চার্লস! গ্রামীণ ব্যাংকের একজন ম্যানেজারের সাথে ঘণিষ্ঠতা হয়। তার কাছ থেকেই জানতে পারি, কিভাবে কাজ করে গ্রামীণ ব্যাংক। তখন ২০% সুদ ছিল। অন্য ব্যাংকে ১৩-১৭% সুদ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বহু ধাপ, বহু সময় দিতে হয়। মর্টগেট, স্ট্যাম্পিং, মূল্যায়ন, আইনজীবীর মতামত, সার্ভি সচার্জ ইত্যাদি যোগ করলে সুদের হার কত দাঁড়ায়? এখন ব্যাংকে সুদের হার ১০-১৪%। অন্য এনজিওগুলো ৮০-৯০%ও সুদ নিতো। তাদের নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি!
আমি বহু গ্রামীণ ব্যাংকের নারী সদস্যর সাথে কথা বলেছি। কখনোই নেতিবাচক কিছু শুনিনি। তারা বলতো, ‘কখনো ৫শ টাকার নোট চোখে দেখিনি, সেই আমাকেই গ্রামীণ ব্যাংক ৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে —- করে ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়েছি। এখন আমরা ভাল আছি।’ আমার এক আত্মীয়র ছেলে ও মেয়ে বিনা সুদে গ্রামীণ ব্যাংকের শিক্ষা ঋণ নিয়ে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেছে। গ্রামীণ জনপদে এক অবিশ্বাস্য অর্থপ্রবাহ ঘটায় গ্রামীণ ব্যাংক। এর আগে মহাজনদের কাছ থেকে ১২০% হারে সুদে টাকা নিতো মানুষ এবং সর্বশান্ত হয়ে জমি লিখে দিতে হতো। সেই পরিবর্তনটা কিছু মানুষ শুধু রাজনৈতিক কারণেই মেনে নিতে চাচ্ছে না।
২০০৮ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারেনি বলে সাতক্ষীরার এক নারী আত্মহত্যা করেছিল। সেই সংবাদ খুব চলছে। এরমানে হল, গ্রামীণ ব্যাংকের নেতিবাচক সংবাদ খুবই কম। দেশে বছর ৬৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। গ্রামীণ ব্যাংকের ১ কোটি সদস্যর মধ্যে কতজন আত্মহত্যা করে? গড়েতো বছরে ৬-৭ হাজার করার কথা। করেছে ২০০৮ সালে ১ জন!
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ইউনুস বাধা দিয়েছেন- এমন একটা প্রমাণ কিন্তু আমাদের কাছে নেই। তিনি সুদখোর হলে, সারাদেশের সব ব্যাংকার ও গ্রাহকও সুদখোর, দেশও ঋণ নেয়/দেয় বলে দেশও সুদখোর। এসবই খুব শস্তা কথা। বিশ্ব অর্থনীতিই দাঁড়িয়ে আছে সুদের উপর। কারো কাছে টাকা থাকবে আর কেউ টাকা কাজে লাগাতে শিখবে। এ দুটির সমন্বয়ই আজকের অর্থনীতি।
ইউনুস কি একাত্তরে স্বীনতার বিরুদ্ধে ছিল?
ইউনুস কি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ গড়তে ৭২ সালেই দেশে ফিরেননি?
ইউনুসের জামিনদারিত্বে ওই সময়ে ১০ লক্ষ টাকা গ্রামীণ নারীদের দিয়েছিল ব্যাংক। আপনি কি এমন জামিনদার হবেন?
ওনি বিদেশে চাকরি করতে পারতেন, দেশেও নির্ঝঞ্জাট অধ্যাপনা করতে পারতেন। অধ্যাপনার সুখের চাকরি ছেড়ে তিনি তো ঝুঁকি নিয়েই এসেছেন গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে তুলতে।
আমার এক বন্ধু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশের সবচেয়ে শিক্ষিত অপদার্থের নাম ইউনুস! ওনিও রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকেই লিখেছেন। কিন্তু ওনি কী বিস্তারিত বলবেন, ‘কেন দেশের সবচেয়ে বড় অপদার্থ ইউনুস?’ একজন বড় অপদার্থের জন্য কেন পৃথিবীর এতো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ভাবছে? কেন সারা পৃথিবী ইউনুসকে শ্রদ্ধা করে? কেন প্রবাসী একজন ট্যাক্সি চালক নিজের দেশের নাম বললে, ‘যাত্রীরা খুশি হয়ে বলে, ওহ! তুমি ড. ইউনুসের দেশের লোক!’ সারা পৃথিবীর বহু মানুষ ওনার কথা শুনতে কেন লাইন ধরে টিকিট কাটে? কেন ওনার একটি অটোগ্রাফের জন্য বহু মানুষ অস্থির হয়ে উঠে? ওনি যে তিন শূন্যর কথা বলেন তা কি ভুল? বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও কার্ব ন নিঃসরণ দূর করার কথা ওনার চেয়ে জোরালোভাবে আর কে বলেছে? সামাজিক ব্যবসার তত্ত্ব কি মন্দ কিছু?
যারা ওনাকে গালি দেন, তাদের কাছে আকুল আবেদন, প্লিজ ওনার অপরাধটা অন্তত বলুন? নোবেল পাওয়ার কারণেইতো ওনি আর নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন? ওনাকে অসম্মানের পরিণতি কি দেশের জন্য মঙ্গলজনক? এই যে, ১৮৩ জন বিশ্বনেতা বিবৃতি দিল তার কি কোন মূল্য নেই? সারা পৃথিবীতে একটা বার্তা ছড়িয়ে যাচ্ছে যে, আমাদের একমাত্র নোবেল বিজয়ীকে আমরা নিপীড়ন করছি!