সম্প্রতি এক ইউএনও এক সংবাদ মাধ্যমের কর্মীকে অকাথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। যে ঘটনা যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নজরে আসে সংবাদ মাধ্যমে উর্ধতন কর্মকর্তাদের। এরপর চাপ সৃষ্টি হয় কায়সার খসরুর বিরুদ্ধে। একপযায়ে ঘটনাটি গিয়ে দাড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরু ‘নিচু স্থানে নির্মিত উপহার বাড়ি পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করায় ঢাকা পোস্টের এক প্রতিবেদককে গালিগালাজ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (২৪ জুলাই) দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
হাইকোর্ট বলেছেন, ইউএনও কায়সার খসরোর গালিগালাজ দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। একজন ‘কালার হেডেড’ ব্যক্তি শুধু এই ধরনের অপব্যবহার করতে পারে। ইউএনও যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তা মাস্তানের চেয়েও খারাপ। তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ঢাকা পোস্টে ‘নিচু জায়গায় নির্মিত উপহার বাড়ি পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা হোয়াবরাং এলাকায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন সব ঘর পানিতে ভাসছে। ফলে সেখানকার ২৭টি পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এত নিচু জায়গায় গিফট হাউস স্থাপন নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় জনগণ। তাদের অভিযোগ, ঘর নির্মাণে মাটির নিচে ইট ব্যবহার করা হয়নি। এ ছাড়া নিম্নমানের ইট, বালি-রড, কাঠসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। তারা এর জন্য নির্মাতাকে দায়ী করে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার সময় তিনি মুজিব বর্ষের বাড়ি-ঘর চিনতে পারেননি এবং আশপাশের বাড়ি-ঘর দেখেননি, তিনি শুধু মুজিব বর্ষের বাড়ি-ঘর দেখেছেন। একজন চোর, আরেক সাংবাদিক, একজন হলুদ সাংবাদিক ও ইয়াবার সাথে জড়িত একজন সাংবাদিক আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।
প্রকাশিত সংবাদে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরায় ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধির ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাত সোয়া ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে তার অফিসিয়াল নম্বর থেকে ফোন করেন। ঢাকা পোস্টের কাছে এই কলের অডিও রেকর্ড রয়েছে।
পরে শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে হিলডাউন সার্কিট হাউসে মামুনুর রশীদের উদ্যোগে কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় জেলা প্রশাসক মো. এদিকে অকথ্য ভাষা ব্যবহারের জন্য ঢাকা পোস্টের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কায়সার খসরু।
বৈঠকে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, এ ব্যাপারে আমরাও খুবই লজ্জিত। একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে এমন অপবাদ আশা করা যায় না। এ সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, অফিসিয়াল ডিউটিতে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। তিনি কক্সবাজার ও টেকনাফে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাকে দ্রুত অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, বিগত দুমাস আগে থেকে পাল্লায় পাল্লয় একরপর এক জেলা গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে বন্যায়। তার মধ্যে সবথেকে আলোচিত জেলা সিলেট। বিপুল সংখ্যক লোক এই বন্যায় প্রয়াত ও আহত হয়েন। সর্বশান্ত হয়েছেন সাধারন মানুষসহ প্রভাবশালীরাও।