সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রশংসা করতে একটু বেশি বাড়তি কথা বলে ফেলেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মমিনুর রহমান। তিনি বলেছেন, ”আওয়ামী লীগের জন্য বিএনপি-জামায়াতের দোয়া করা উচিত।” আর এই থেকেই সারা দেশে এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা। এবার এ নিয়ে একটি বিশেষ লেখনী লিখেছেন হাসান শান্তনু। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু :-
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ‘নাস্তিকতাকে লালন’ করার জন্য কঠোরভাবে অভিযুক্ত করা হয়। বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়াসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বাম নেতারা ‘নাস্তিক’- এই প্রচারণাও দেশে। সরকারের বিরুদ্ধে ‘নাস্তিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার’ অভিযোগ দূর করতে ওই বৈঠকে মেনন, ইনু সিদ্ধান্ত নেন, তারা হজ করতে শিগগিরই সৌদি আরবে যাবেন। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হওয়ায় সভায় নীরব থাকতে হয়েছে দিলীপ বড়ুয়াকে। ওয়ার্কার্স পার্টির মেনন, জাসদের ইনু হজে গেছেন। আওয়ামী লীগের জন্য দোয়া করবেন।
যেহেতু ধর্ম পালন একটি ব্যক্তিগত বিষয় তাই তাদের হজ নিয়ে কথা বলার অধিকার কারো নেই। হজ অনুষ্ঠানের সময় তাদের ফটোশুট, এমনকি ইহরামেও, এই ধারাটিকে সন্তুষ্ট করার প্রচারণার পিছনে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হয়েছিল, যেটি সরকারকে ‘নির্মূল’ করার অভিযোগ এনেছিল। এটা বলা যেতে পারে. যখন একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী একটি দেশের সরকারকে ‘ধর্ম-বিরোধী’ বলে অভিযুক্ত করে, তখন প্রগতিশীল নেতারা সেই সরকারের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে হজ করে এবং ফটোশুট করে প্রতিক্রিয়া জানায়, মেনন এবং ইনু ছাড়া, উপমহাদেশে আর কেউ ঘটেনি। আওয়ামী লীগের শরিকরা সেদিন উগ্রবাদীদের অভিযোগের যৌক্তিক জবাব দেয়নি।
আসুন জেনে নিই আওয়ামী লীগের সমর্থক একজন সাংবাদিকের কথা। দলের টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকারের সময়ে যিনি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অকল্পনীয়। আওয়ামী লীগ, দলের সরকার যখন কোনো ইস্যুতে রাজনৈতিক বিতর্কের মুখোমুখি হয়, তখন নেতা তার ফেসবুক ওয়ালে ‘আয়াতুল কুরসি’ শেয়ার করেন, দলের ‘কঠিনতা’ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করেন। আওয়ামী লীগের সৃষ্ট ‘সাংবাদিক, লেখক’ দলের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থনের নমুনা। কাজটিও করছেন ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা। তিনি ফেসবুকে ঘোষণা করেছেন, ‘মৃত্যুর পর তার জানাজায় যাতে আরও বেশি মানুষ অংশ নেয় সে লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন’। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নয়।
আওয়ামী লীগের কাছে দোয়া চেয়ে সর্বশেষ ‘রেকর্ড’ করলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মমিনুর রহমান। এই ‘মুর্দে মোমিন’ আমলা আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপি ও জামায়াতের কাছে দোয়াও চেয়েছেন। কেন বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের জন্য দোয়া করবে তার কোনো আমলাতান্ত্রিক ব্যাখ্যা হযরত মোমিন দেননি। ক্ষমতাসীন দলের জন্য দোয়া-মেহসিলের আহ্বান করা কোনো জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নয়। এ ধরনের বক্তব্যের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তার দোয়া নিয়ে আওয়ামী লীগেরও খুশি হওয়ার কিছু নেই। যখন সরকার থাকে তখন সেই সরকারের জন্য দোয়া ও মাহফিলের কাজ মুমিনরা করেন। বঙ্গবন্ধু, খালেদ মোশাররফ, জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা দখল করে আমলাতন্ত্রের ‘আনুগত্য’ না থাকার নজির নেই।
প্রসঙ্গত, এ দিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মমিনুর রহমান এমন একটি মন্তব্য করে বেশ সমালোচনার মধ্যে পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাকে সবাই করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এবার তিনি আরো বড় শাস্তি পেতে যাচ্ছেন। জানা গেছে তার এই মন্ত্যবের জেরে এবার তিনি হারাতে চলছেন রিটানিং অফিসার এর পদ ।