জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন খসড়াভাবে সময় জানিয়েছে। এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দল শক্তিশালী করতে ও সাজাতে ব্যস্ত। এদিকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগও তৃণমূল পর্যায়ে হতে শুরু করে দলের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতৃত্ব কারা থাকবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে। আ.লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে আর চার মাস বাকি থাকলেও কে হবে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সে বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পদ পেতে অন্তত ৮ জনের নাম বিশেষভাবে শোনা যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দল গোছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন কার্যক্রম জোরকদমে চলছে। এরপর ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দল গোছানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হবে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যেই দলের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরে এই সম্মেলন আয়োজনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে চূড়ান্ত তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের কর্মকর্তা-সদস্যের সংখ্যা ৮১ জন। এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ আলোচনায় শীর্ষে রয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতি পদে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবছেন না দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন, তার যোগ্য নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। এ জন্য দলের সভাপতি পদে তার বিকল্প নেই।
সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে যতবারই শেখ হাসিনা নতুন সভাপতি নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন, কাউন্সিলরদের তীব্র প্রতিরোধের কারণে তা টেকেনি। প্রতিবারই কাউন্সিলররা সর্বসম্মতিক্রমে তাকে দলীয় সভাপতি নির্বাচিত করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
যে কারণে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে দলের আগ্রহ বেশি। তারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই করছেন। নেতাকর্মীদের মতে, যে নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত পাবেন তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক। ফলে সংগঠনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা কে হচ্ছেন তা নিয়ে নেতাকর্মীরা জল্পনা-কল্পনা করছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো নেতা টানা দুই মেয়াদের বেশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকার নজির নেই। সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের টানা দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এবারও সাধারণ সম্পাদক পদে তার নাম বলা হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে দলের সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম শোনা যাচ্ছে।
পাশাপাশি এ পদে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। এই দুই নেতা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। অনেকের ধারণা ওবায়দুল কাদের যেহেতু ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, সে পরম্পরায় ছাত্র বা যুবলীগের সাবেক শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য নেতাদের তালিকায় রয়েছেন দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। তারা হলেন মাহবুবুল-আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তাদের মধ্যে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
এসব নেতার কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক পদে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ প্রার্থী নন। সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। মনোনয়ন ও সমর্থনের পর কাউন্সিলররা নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা সমকালকে বলেন, সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমানে অনেক নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ যত ঘনিয়ে আসবে এই সংখ্যা কমবে। অবশ্য এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ ও তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহী নেতাদের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা না করলেও নানাভাবে নিজেদের তুলে ধরছেন; পরোক্ষভাবে আগ্রহ প্রকাশ করা। এছাড়াও সম্ভাব্য লবিস্টদের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখা। কেউ কেউ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাদের উপস্থিতি আগের চেয়ে বেড়েছে। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
তবে অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, সম্ভাব্য সব প্রার্থীই সিরিয়াস প্রার্থী নন। তাদের বিবেচনায় কেউ কেউ সাধারণ সম্পাদক পদে নিজেদের আগ্রহের ঘোষণা দিয়ে আগামী সম্মেলনে নিজেদের শক্ত অবস্থানের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন। প্রার্থী হয়েও তারা এমন কাউকে সমর্থন করছেন যার ভেতরে প্রকৃত সম্ভাবনা রয়েছে। তার সমর্থিত নেতা সাধারণ সম্পাদক হলে বাড়তি সুবিধা পাবেন বলে মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, দলের জাতীয় সম্মেলনের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে দলের তৃণমূল পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নেতাই সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন। অর্থাৎ নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের সময় সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতার পাশাপাশি সর্বস্তরে নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কে আসতে পারেন সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিংবা আশাব্যঞ্জকভাবেও কারো নাম বলতে পারছে না কেউ। তবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই প্রাধান্য পাবে সেটাই ধরে নিয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। তবে দলের যোগ্য নেতাকেই আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত করবে এমনটাই জানিয়েছে দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।