সামনে আসতে চলছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সম্মেলন। আর প্রতিবারের মত এবার এই সম্মেলনে ঠিক হবে দলের সভাপতি ও সম্পাদক হবে কে। ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টানা দুই মেয়াদে এই পদে রয়েছেন। এর আগে কোনো সাধারণ সম্পাদক টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেননি। তাহলে এখন মূল আলোচনা হচ্ছে ওবায়দুল কাদের নেই, নাকি হ্যাটট্রিক করছেন?
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। বিএনপির বিশাল জনসমাবেশের পরিবর্তে আওয়ামী লীগও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে। এরই মধ্যে আগামী ২৪ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন দলটির জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্মেলনে আগামী তিন বছরের জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কে দেবেন তা নির্ধারণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, শেখ হাসিনাই সভাপতি পদে থাকবেন-এটা প্রায় নিশ্চিত। আর সাধারণ সম্পাদক নিজেই সিদ্ধান্ত নেন সভাপতি। এবার কে সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন তা নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে বা ঘনিষ্ঠ নেতাদের কোনো বক্তব্য দেননি দলের সভাপতি। তিনি সাধারণত জাতীয় সম্মেলনের তিন থেকে সাত দিন আগে বিষয়টি প্রকাশ করেন। এবারও তাই হওয়ার কথা।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক রাখা এবং নতুন কাউকে নির্বাচন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, জাতীয় নির্বাচন ও বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ওবায়দুল কাদের পিছিয়ে থাকতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও ওবায়দুল কাদেরের বাড়তি তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপি নেতাদের অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন তিনি। তিনি আরও বলছেন, আন্দোলন ও ভোটের মাঠে বিএনপির সঙ্গে ‘খেলা’ হবে। করোনা মহামারীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দৃশ্যমান না হওয়া ওবায়দুল কাদেরের এই রাজনৈতিক তৎপরতা তার অনুসারীদের আশার আলো দেখাচ্ছে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রায় এক ডজন নেতা নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের গত ১৩ বছরের ধারাবাহিক ক্ষমতায় তিনবার দলের জাতীয় সম্মেলন হয়েছে। প্রতিবার কাউন্সিলরদের গোপন ব্যালটে নয়, সর্বসম্মতিক্রমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। সম্মেলনের আগে কেউ কোনো পদে আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি, কেউ প্রচারণাও করেননি। তবে ভেতরে-বাইরে নেতারা কাঙ্খিত পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা:
প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০০৯ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক হন। এর আগেও এই পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা ছিল। সৈয়দ আশরাফের দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৬ সালে ওবায়দুল কাদের এই পদে আসেন। এখন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। গত দুই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাকের নামও বেশ আলোচনায় ছিল।
আব্দুর রাজ্জাকের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী আরও কয়েকজন নেতা নানাভাবে তৎপর রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব উল আলম হানিফ, হাসান মাহমুদ, দীপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত জাতীয় সম্মেলনের আগে দলের সাংগঠনিক পর্যায়ের কয়েকজন নেতাও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় ছিলেন। তাদের মধ্যে বর্তমান নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অন্যতম। এবার তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই। তবে আলোচনায়। আলোচনায় যোগ দিয়েছেন দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ ও মির্জা আজম। এ ছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামীলীগের এবারের সম্মেলনে যে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে চলছে তা নিয়ে নেই কোনো সন্দেহ। উচ্চ অনেক পর্যায়ে আসতে চলছে বড় ধরণের রদবদল। এ ছাড়াও দলীয় অনেক সূত্র থেকে জানা গেছে এবার দলটিতে আসতে পারে নতুন অনেক মুখও।