Friday , December 27 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আ. লীগের সঙ্গে ছিলেন, বিএনপিতেও পেলেন সাধারণ সম্পাদক পদ

আ. লীগের সঙ্গে ছিলেন, বিএনপিতেও পেলেন সাধারণ সম্পাদক পদ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নে বিএনপির নতুন কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হয়েছেন মো. আনোয়ার হোসেন, যিনি অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে বিভিন্ন ইউনিয়নের নবগঠিত কমিটির নাম ঘোষণা করেন। জাফতনগর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আনোয়ার হোসেনের নাম ঘোষণা করার পর থেকেই স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

ফটিকছড়ি বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেছেন, আনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রচারণায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। তিনি ফটিকছড়ি থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা খাদিজাতুল আনোয়ার সনির পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়বের প্রচারণাতেও সক্রিয় ছিলেন।

বিএনপির নেতাকর্মীদের ভাষ্য অনুযায়ী, আনোয়ার হোসেন অতীতে আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের প্রশ্ন, একজন ব্যক্তি যিনি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন, তিনি কীভাবে বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হন?

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আনোয়ার হোসেন হঠাৎ করেই বিএনপিতে যোগদান করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিএনপির স্থানীয় নেতারা দাবি করেন, তারা মাঠে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন। অথচ আনোয়ারের মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো তাদের প্রতি অবিচার।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আমাদের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করা যুক্তিযুক্ত নয়। বিএনপির অভ্যন্তরে কি কোনো যোগ্য নেতার অভাব ছিল?”

ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার অবশ্য আনোয়ার হোসেনের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেন, আনোয়ার হোসেন বাজার কমিটিতে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তিনি আরও বলেন, “আনোয়ার হোসেন ইচ্ছে করলে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের কোনো পদে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাকে এই পদে মনোনীত করার পেছনে যোগ্যতার বিষয়টিই বিবেচনা করা হয়েছে।”

আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে বাজার কমিটির সঙ্গে যুক্ত এবং বাজার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতার কাছে যাওয়া ছাড়া আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না। আমি সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও যুক্ত এবং এ কারণেই বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমার ছবি রয়েছে। তবে আমি কখনোই আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলাম না।”

বিএনপির নেতাকর্মীরা এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। অথচ হঠাৎ করে কেউ এসে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যাচ্ছেন। এতে দলের প্রতি আমাদের আস্থায় চিড় ধরছে।”

গত ১৮ ডিসেম্বর জাফতনগর ইউনিয়নে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ওই দিনই আনোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক এবং মো. নুর উদ্দিন খানকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার তাদের দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।

তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজমান অসন্তোষ এবং আনোয়ার হোসেনের অতীত নিয়ে বিতর্ক নতুন কমিটির কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার দুর্বলতার প্রতিফলন। দলের নেতাদের দাবি, যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের পদায়ন দলের আদর্শ এবং ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এই বিতর্ক শুধু ফটিকছড়ি বিএনপিতেই নয়, বরং দেশের বিভিন্ন জায়গায় দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যেভাবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তা দলীয় নেতৃবৃন্দের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আনোয়ার হোসেনের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন বিএনপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ দলের ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দলীয় নেতৃত্ব যদি এমন সিদ্ধান্তে পুনর্বিবেচনা না করে, তবে তা ফটিকছড়ি বিএনপির ভবিষ্যতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

About Nasimul Islam

Check Also

খেজুরের রস পান করতে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, গ্রেফতার ১৫

নেত্রকোনা থেকে খেজুরের রস খেতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া আসা ১৫ যুবক ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *