রাজধানীর র্যাব হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত বিতর্কিত ‘আয়না ঘর’ পরিদর্শনে গিয়ে নিজেদের বন্দি থাকার সময়কার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ছেলে হুমায়ুন চৌধুরী।
পরিদর্শনকালে তারা জানান, কিভাবে বিনা বিচারে বছরের পর বছর নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে এবং সেখানে কী ধরনের অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন তারা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আযমী জানান, “আমাকে বিনা কারণে আটক করে দীর্ঘদিন বন্দি রাখা হয়েছিল। এমনকি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগও দেওয়া হয়নি। আমার ওপর চলেছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। দিনের পর দিন অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হতো, খাবার দেওয়া হতো অতি সীমিত পরিমাণে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাকে জঙ্গি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, অথচ আমি সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলাম। আমার অপরাধ ছিল শুধু আমার রাজনৈতিক আদর্শের কারণে।”
সাকা চৌধুরীর ছেলে হুমায়ুন চৌধুরী জানান, “আমার বাবাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তীতে যে বিচার করা হয়েছিল, তা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। আমার পরিবারকে টার্গেট করা হয়েছিল এবং আমাদের উপর ভয়াবহ মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বাবাকে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা জানতাম না, তিনি কোথায় আছেন। এমনকি আদালতে বিচার হওয়ার আগেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরিকল্পনা ছিল। আজ এই আয়নাঘর দেখে বুঝতে পারছি, তখন কী ধরনের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড হয়েছে।”
পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “আমরা এতদিন যা শুনেছি, আজ তা বাস্তবে দেখলাম। এখানে যা ঘটেছে, তা ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের নির্যাতন কেন্দ্র চালানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি যেন আর কখনো না ঘটে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গুম কমিশনের প্রতিবেদনে আয়নাঘরের সম্পূর্ণ নথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করা হবে এবং এ সংক্রান্ত সকল তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, “যারা এই নির্মম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার হবে। কোনো অন্যায়কারী দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না।”