অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত ‘আয়না ঘর’ পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় তিনি আয়না ঘরসহ তিনটি স্থান ঘুরে দেখেন, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের আটকে রাখা হতো বলে দাবি করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে শফিকুল আলম জানান, কিছু ভুক্তভোগীকে আট-নয় বছর পর্যন্ত বন্দি রাখা হয়েছিল।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটি এক বিভৎস দৃশ্য। মানবতাবোধের চূড়ান্ত অবক্ষয়ের একটি নিদর্শন। এখানে যা ঘটেছে, তা অকল্পনীয়। শুনলে বিশ্বাস হয় না যে এটি আমাদের দেশ, আমাদের সমাজেরই অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষকে বিনা কারণে ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে এসব টর্চার সেলে নির্যাতন চালানো হতো।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, “এখন শুনছি সারা দেশে সাতশ থেকে আটশ আয়না ঘর রয়েছে। এতদিন ধারণা ছিল এটি কেবল এখানেই রয়েছে, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরও বেশি।”
গুম কমিশনকে আয়না ঘরের অস্তিত্ব প্রকাশ্যে আনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “পূর্ববর্তী সরকার দেশে আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করেছিল।”
তিনি জানান, গুম কমিশনের প্রতিবেদনে এই আয়না ঘরের নথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করা হবে এবং ভবিষ্যতে বিচার প্রক্রিয়ায় এসব তথ্য-প্রমাণ ব্যবহার করা হবে।
এ সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”
পরিদর্শনকালে প্রধান উপদেষ্টা বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা শোনেন।
উপদেষ্টাদের মধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও গুম কমিশনের সদস্য নুর খানও আয়না ঘর পরিদর্শনে অংশ নেন।
উল্লেখ্য, দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম নিজেরাও একসময় আয়না ঘরে বন্দি ছিলেন এবং তারা সেই স্থান চিহ্নিত করেছেন।
পরিদর্শনকালে গুম হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী ও দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমেদ বিন কাশেম উপস্থিত ছিলেন।