ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক অন্যতম নক্ষত্র সোহেল রানা। যিনি ক্যারিয়ারে একনাগারে বেশকিছু ব্যবসায় সফল সিনেমা উপহার দিয়ে লাখ লাখ মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। এছাড়াও নির্মান করেছেন একাধিক সিনেমা। সব মিলয়ে ভক্তদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা কারও থেকে কম নয়। এদিকে সম্প্রতি গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে গুণী এই তারকার অভিনীত নতুন আরেকটি সিনেমা।
নতুন সিনেমা মুক্তি এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে এবার কথা হলো সোহেল রানার সঙ্গে-
অনেকদিন পর আপনার নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, কেমন লাগছে?
আমার সিনেমা মুক্তি পেয়েছে অথচ আমিই জানি না। পত্রিকার মাধ্যমে জানতে হলো। সিনেমার পরিচালক বা প্রযোজকের কাছ থেকে জানলে খুশি হতাম। প্রথমত একটু খারাপ লাগল মুক্তির ব্যাপারটি জানি না বলে। আবার এটা ভেবে ভালো লাগছে যে, এত বছর আগেকার সিনেমাটি অবশেষে মুক্তি পেয়েছে। এই সিনেমার প্রযোজক ডিপজল, তার আয়োজন খুব ভালো। ভালো ভালো সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। ভালো সিনেমার জন্য ডিপজল কখনো কৃপণতা করেন না। পরিচালক এফআই মানিক আমার পছন্দের মানুষ। একসময় এজে মিন্টুর সহকারী ছিলেন, চুজি পরিচালক। ওকে খুব স্নেহ করি।
‘এ দেশ তোমার আমার’ সিনেমা নিয়ে প্রত্যাশা অনেক। কেননা একজন ভালো পরিচালক, ভালো প্রযোজক এবং শিল্পীর সমন্বয় আছে। এতে আমি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছি। চরিত্র ও গল্প পছন্দ না হলে কাজ করি না। সেদিক থেকে ভালো কাজ হয়েছে। দর্শকের কাছে একটু বেশিই প্রত্যাশা আমার। তবে, আরও আগে রিলিজ হলে ভালো হতো।
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমায় আপনার ২ সহশিল্পী দিতি ও মিজু আহমেদ প্রয়াত হয়েছেন। ওনাদের নিয়ে কিছু বলুন…
দু’জনেই আমার প্রিয় সহশিল্পী। এত দ্রুত চলে যাবেন ভাবিনি। আসলে চলে যাওয়ার তো বয়স নেই, তারপরও বলব চলে যাওয়ার বয়স হওয়ার আগেই তারা চলে গেছেন। সত্যি কথা বলতে পরিচিত মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই বয়সে প্রায়ই চিন্তা করি সমবয়সী বন্ধুদের বা শিল্পীদের মধ্যে ক’জন বেঁচে আছেন? সত্যি বলতে সেই সংখ্যা কম। সম্প্রতি আহমেদ শরীর ফোন করেছিলেন। একই কথা বললেন। ৫ থেকে ৭ জন ছাড়া কেউই বেঁচে নেই। তাদের কেউ হুট করে চলে গেছেন। মাঝে তো এমন অবস্থা হলো- আজ একজন নেই, পরশু আরেকজন নেই। এসব কারণে খুব ভয় হতো। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। দিতি ও মিজু আহমেদের জন্যও খারাপ লাগে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন, তারপরও কী কোনো আফসোস আছে?
একদিকে দিয়ে আফসোস নেই। আরেক দিক দিয়ে আছে। শখ ছিল সংগীত শিল্পী হওয়ার। কিন্তু, হয়ে গেলাম নায়ক। ১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগ করার সময় জেল খেটেছি। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। দুঃখ নেই, হতাশও নই। তারপরও আফসোসের জায়গা থকে বলি, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তির বিষয়টি। আমি ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি। তাই ওই প্রাপ্তিটা অনেকটা তৃষ্ণার মতো।
এফডিসির খোঁজ-খবর রাখেন?
রাখি। আমি মনে করি যা গেছে তা আর আসবে না। ওটা ডেড আর জাগবে না। ওখানে যাওয়া মানে মৃত মুখ দেখার মতো আর কী। ফিল্মের দিন তো দূরের কথা, ওটা ডেড সহজে ঠিক হবে না। ফিল্ম ইজ ডেড। তবে ফিল্ম থকবে, হয়তো এই ফরমেটে থাকবে না। এখন যে ডিজিটাল ফরমেট এটাও থাকবে না একসময়। আরও চেঞ্জ হবে। মেধাবীরা এসে ফিল্মের পুর্নজাগরণ ঘটাবে। ৫ কিংবা ১০ বছরে কিছু হবে না। যে যতো কথা বলুক না কেন- হবে না। আমার সিনেমা মুক্তি পেল, অথচ অনেকেই কিন্তু জানে না। আমার ফ্যানরাও জানল না।
১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় আগমন করেই ভক্তদের নজর কারেন সোহেল রানা। এরপর থেকে একে একে বেশকিছু জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌছে যান তিনি। বর্তমানেও বেশ দক্ষতার সাথে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন গুণী এই অভিনেতা।