বুধবার সন্ধ্যা ৬টা। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সিনেপ্লেক্সে ‘পেয়ার সুবাস’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীর জন্য অপেক্ষা করছেন একগুচ্ছ তারকা ও গণমাধ্যমকর্মী। অভিনেত্রী জয়া আহসান, তারিক আনাম খান ও আহমেদ রুবেল অভিনীত এই ছবিটি দেখতে হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই। অপেক্ষা শুধু অভিনেতা আহমেদ রুবেলের। কিন্তু না সে আসেনি।
সাড়ে ৬টার দিকে ফোন এল। অনুষ্ঠানে এসে অভিনেতা আহমেদ রুবেল মারা যান বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি। তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলেও আয়োজকরা জানিয়েছেন। সে সেখানে. চ্যানেল 24 এবং অন্যান্য সাংবাদিকরা সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে যান। কিন্তু তার আগেই কী হল হাসপাতালে অভিনেতার?
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বিছানায় শুয়ে আছেন আহমেদ রুবেল। পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার বোন। তাদের চোখে-মুখে জল। ভাই হারানোর বেদনা। মাঝখানে কিছুক্ষণ পর কান্নাকাটি করে ওরা বলছিল, ভাই এখন চলে গেলেন কেন! তাদের পাশে কাঁদছিলেন অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম, সুষমা সরকার। আর এদিক-ওদিক ছুটছিলেন নির্মাতা নুরুল আলম আতিক। হয়তো চোখের কোণে অশ্রু লুকানোর চেষ্টা করছিল।
এই যাত্রায় জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে রয়েছেন নির্মাতা নুরুল আলম আতিক। তার কান্না দৃশ্যত বেমানান. কিন্তু কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারেননি। একটু আড়াল হতেই সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। আর স্ত্রী মতিয়া বানু তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। মাঝে মাঝে সেও কাঁদে।
আহমেদ রুবেলকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিনেতার সঙ্গে থাকা সব জিনিসপত্র তার স্বজনদের বুঝিয়ে দেন। একটি মানিব্যাগ ছিল, যার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল। বের করার সময় তার বয়স জানা যায়। তার বয়স 55 বছর আট মাস। তবে এই বয়সেও দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে পর্দা বা মঞ্চে দোলা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ওইদিন বুধবার সন্ধ্যায় তার গলার স্বর মলিন হয়ে যায়। আত্মীয়স্বজন, শিল্প সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
আগের ঘটনা:
গাজীপুর থেকে বসুন্ধরা শপিংমল: বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ৩টায় গাজীপুরে পৈতৃক বাড়ি ছায়াবীথি থেকে রাজধানীর বসুন্ধরার সিনেপ্লেক্সে ‘পেয়ার সুবাস’ ছবির প্রদর্শনীতে অংশ নিতে রওনা হন তিনি। নিজেই চালালেন। আসার সময় তিনি প্রযোজক নুরুল আলম আতিককে উত্তরা থেকে গাড়িতে তুলে নেন। এরপর একজন সহকারী পরিচালকও উঠে আসেন।
পরিচালক নুরুল আলম জানান, তিনি নিরাপদে গাড়ি চালিয়েছেন। আমরা তিনজন গাড়িতে আড্ডা দিলাম এবং বিকেল পাঁচটার দিকে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে পৌঁছলাম। পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে লিফটে যাচ্ছিলেন আহমেদ রুবেল। এ সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি মেঝেতে পড়ে যান। মাথায় আঘাত পান তিনি। এরপর নুরুল আলম আতিক ও আশপাশের নিরাপত্তারক্ষীরা অভিনেতাকে আটক করতে এগিয়ে আসেন।
এ নির্মাতা বলেন, সবাই মনে করছিলেন মাথা ঘুরে পড়ে গেছে আহমেদ রুবেল। এ জন্য তাকে আমরা শপিংমলের প্রথম তলায় ইমারজেন্সি চিকিৎসাকেন্দ্রে নেই। সেখান থেকে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতলে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় আমাদের।
বসুন্ধরা থেকে স্কয়ার হাসপাতাল: গাজীপুর থেকে ঢাকায় নিজেই গাড়ি চালিয়েছেন অভিনেতা আহমেদ রুবেল। এ কারণে তার সঙ্গে কোনো চালক ছিল না। শপিংমলের পার্কিং প্লেস থেকে গাড়ি বের করার পরও হাসপাতাল রোডে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। এ কারণে তাকে দ্রুত সামনের সিএনজিযোগে স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকের ভাষ্যমতে- আহমেদ রুবেলকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন বিকেল আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটে ৫০ মিনিট। তাকে হাসপাতালে আনার পর তার শরীরে কোনো স্পন্দন পাওয়া যায়নি। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। অর্থাৎ বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আর সন্ধ্যা ৬টার দিকে অভিনেতা আহমেদ রুবেলকে মৃত ঘোষণা করা হয়।