দেশের অন্যতম রাজনৈতিক ও ঐতিহ্যবাহী একটি দল বিএনপি। তবে গত কয়েক বছর ধরেই ক্ষমতার বাইরে রয়েছে এ দলটি। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে রীতিমতো বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন অনেকেই। তবে সম্প্রতি এদলটির বিভিন্ন নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার প্রধানের কার্যালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দেন।
আর এরই জের ধরে এবার বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলেও তাদের বাধা দেওয়া হবে না। বরং হেঁটে অফিসে আসতে পারলে সম্মানের সঙ্গে বসিয়ে চা খাওয়াব। তাদের কথা শুনতে আপত্তি নেই।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভায় এসব কথা বলেন দলটির সভাপতি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের শুরুতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার থেকে কার্যত সভায় ভাষণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলেছি, তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসলে পুলিশ যেন বাধা না দেয়। বিশেষ করে বাংলামোটর ব্লক করে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি।
‘আসুক না, হেঁটে হেঁটে যতদূর আসতে পারে; কোনো আপত্তি নাই. আমি তাদের বসিয়ে চা খাওয়াব, তারা কথা বলতে চাইলে শুনব। কারণ আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তবে বোমাবাজি ও ভাঙচুর ঠেকাব। যদি তারা তা করে তবে তারা উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া পাবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, একটি দল যদি ৩০০ আসনে ৭৫০টি মনোনয়ন দেয়, তাহলে তাদের নির্বাচন কেমন হয়? একজন বিএনপি অফিস থেকে, আরেকজন লন্ডন থেকে, আরেকজন গুলশান অফিস থেকে দিয়েছেন। যারা এভাবে নির্বাচন করবে, তারা কীভাবে নির্বাচনে জিতবে?
তিনি বলেন, ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বিএনপি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, কি কাজটাই না করেছে। তাদের দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বিদ্যুতের বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়, যোগাযোগে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে এনেছে। আমরা পরপর তিনবার ক্ষমতায় আছি। তাই বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।
আওয়ামী লীগ সব সময় এদেশের মানুষের ভোটাধিকারে বিশ্বাসী উল্লেখ করে দলের সভাপতি বলেন, আমরা সেটাই বিশ্বাস করি। সে কারণে নির্বাচনের মাঠে যতটা উন্নতি হয়েছে, আমাদের সময়ে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করতে সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষমতা নেওয়া হয়- এ ধরনের মানসিকতা যাদের আছে তারা ভোট চুরি করে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ তাই করেছেন। আর খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তিনি আবারও জামায়াতের হাত ধরে এলেন।
আদমশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা খুব বেশি বাড়েনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি ৫০ লাখ প্লাস। বন্যাপ্রবণ এলাকায় পরে অল্প পরিমাণ বাড়তে পারে। কেউ কেউ আমাদেরকে ১৮ কোটি, ১৭ কোটি বলে ডাকে, কিন্তু আমাদের তেমন জনসংখ্যা নেই। তাই আমরা এই লোকদের জন্য খাদ্য সরবরাহ করতে পারি। আমি সবকিছু করতে পারি. অর্থাৎ যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন সব করতে পারব। কিন্তু ডাকাতরা আসলে কী করবে জানি না।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশ ও দেশের মানুষের যতটা উন্নয়ন হয়েছে, অন্য কোনো সরকারের অধীনে এমনটা হয়নি বলেও দেশের ১৭ কোটি মানুষের। আর এই ধারা যেন অব্যহত থাকে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।