অপরাধী যারা তারা সাজা পাবে এটাই স্বাভাবিক। এই সাজা বিচারের মাধ্যমে অপরাধের মাত্রা হিসেবেই আদালত দিয়ে থাকে। তবে অপরাধের মাত্রা যদি লঘু হয় সেক্ষেত্রে লঘু দন্ড দিয়ে থাকে আদালত। তবে আদালত অনেকসময় এমন দন্ড দিয়ে থাকে যার কারণে অপরাধীরা তাদের নিজেদের সংশোধনের সুযোগ পায়। এবার তেমনি ভিন্ন ধরনের সাজা দিলেন আদালত যেখানে আসামিরা বাড়িতে কিছু শর্ত মেনে থাকতে পারবেন এবং নিজেদের সংশোধনের সুযোগ পাবেন।
মৌলভীবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের ১০০টি গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন শর্তে টানা ৭ বছর আদালতে হাজির করায় তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন। তারা পরিবারের সাথে সংশোধন করার সুযোগ পাবে; তবে সবার ১০০টি গাছ লাগাতে হবে। এছাড়াও কোন অপরা’ধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকতে পারবে না।
সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ আলী আহসান ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্তমূলক এ রায় দেন।
আদালত উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, লঘুদণ্ডে অনেকেই কারাগারে গিয়ে আসামির সংস্পর্শে ভবিষ্যতে গুরুতর অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠেন। প্রবেশনের ফলে অভিযুক্তদের নিজেদের সংস্কার করতে এবং অপরাধ প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করবে। দেশের কারাগারগুলো প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসামি রাখা হচ্ছে। প্রবেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, কম সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসবে এবং কারাগারগুলি অতিরিক্ত কয়েদি থেকে মুক্তি পাবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১১ মার্চ মৌলভীবাজারের জুড়ী থানার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে হাতাহাতি হয়। এ ঘটনার পর চন্দন কুমার দাস বাদী হয়ে কবির আহমদ ও মুহিবুর রহমানসহ অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসা’মি করে মামলা করেন। দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাদের প্রত্যেককে বিনাশ্রমে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।
পরবর্তীতে আসামিদের জীবনে প্রথমবারের মতো অপরাধের বিষয়টি বিবেচনা করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুরুতর না হওয়ায় এবং প্রায় ৭ বছর নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার কারণে আদালত তাদের কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেন।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০০টি গাছ লাগানো, নতুন কোনো অপরা’ধে না জড়ানো, নিষিদ্ধ দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা, শান্তি রক্ষা ও সদাচরণ করা, আদালতের নির্দেশমতো হাজির হওয়া ইত্যাদি শর্তে মুক্তি দেন আদালত। এসব শর্ত পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আদালতকে অবহিত করবেন।
আদালতের পিপি রাধাপদ দেব সজল বলেন, অধ্যাদেশটি অনেক পুরনো হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার আলোকে মৌলভীবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটে এর দৃশ্যমান প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক পিপি এএসএম আজাদুর রহমান বলেন, সা”জাপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগারে ব’ন্দি থাকবে না, খোলা হাওয়ায় তাদের পরিবারের কাছাকাছি থাকবে; যা অভিযুক্তদের সংশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বদরুল হোসেন ইকবাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি বলেন, প্রথম এবং লঘু অপরাধ হওয়ায় সে ক্ষেত্রে এই ধরনের বিবেচনা একটি খুবই কার্যকরী এবং প্রশংসনীয় বিষয়। এর ফলে ওই অভিযুক্ত আসামিরা তাদের নিজেদেরকে চমৎকারভাবে সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে এরপর তারা যদি কোন অপরা’ধ করে এবং কারো জীবনকে অস্থির করে তোলে সে ক্ষেত্রে তাদের ফের অন্যভাবে সাজা দেয়া হবে।