প্রধানমণ্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের বিষয়ে কতটুকু খোজ খবর রাখেন সেটা প্রমানিত হলো রাজশাহী জেলা আ.লীগের একটি জনসভায়। তিনি নেতাকর্মীদের বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক কিছু শুনেও থাকেন। তিনি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় এক নেতাকে না দেখতে পেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে খোজা শুরু করেন সেটা সকলের নজর কাড়ে। এই বিষয়টি নিয়ে সেখানো নেতাকর্মীদের মাঝে আলোড়ন শুরু হয়।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা মঞ্চে উঠার পাশ না পেয়ে সভামঞ্চের বাইরের সড়কে দাঁড়িয়ে জনসভা শুনছিলেন।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আসাদকে জনসভার মাঠে আমন্ত্রণপত্র তো দূরের কথা, জনসভা মাঠে প্রবেশের পাশও দেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আসাদকে মঞ্চে ডাকা হয়। প্রধানমন্ত্রী আসাদকে মঞ্চে ডেকে তার সঙ্গে কথা বলেন।
এ বিষয়টি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল ৩টা ৫৪ মিনিটে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জনসভা মঞ্চে আসার পরপরই নেতা-মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি মঞ্চের চারপাশে তাকান যেন তিনি কাউকে খুঁজছেন। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সমাবেশের অন্যতম উপস্থাপক আবদুল ওয়াদুদ দারার কাছে জানতে চান, আসাদ কোথায়? মঞ্চের আশপাশেও নেই। প্রধানমন্ত্রী কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকেও জিজ্ঞেস করেন আসাদ কোথায়?
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাকে মঞ্চের কাছে থাকা এবং জনসভায় আসার পাশ দেওয়া হয়নি। এ কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের প্রতি চরম ক্ষু”ব্ধ হন। তখনই কেন্দ্রীয় এক নেতা আসাদকে দ্রুত মঞ্চে আসতে বলেন। এ সময় জনসভায় ভাষণ দিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। আসাদ মঞ্চের কাছে গিয়ে বসেন।
এদিকে বক্তব্য শেষ করে প্রধানমন্ত্রী আসাদকে মঞ্চে ডেকে তার খোঁজখবর নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে আসাদের সঙ্গে সাত মিনিট কথা বলে মঞ্চ ত্যাগ করেন।
এদিকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান।
ফে”সবুকে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি পোস্ট করে আসাদুজ্জামান লিখেছেন- ‘ধন্যবাদ, সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কী বিষয়ে কথা হয়েছে তা তিনি বলতে চাননি। আসাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার ও প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি তার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
আসাদ আরও বলেন, মঞ্চের আশেপাশে আমাকে না দেখে আপা ডেকে নিয়েছেন। আমি তার জন্য আবার আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।
তবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, বক্তব্য শেষে আসাদুজ্জামান আসাদ প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, আপনি মঞ্চে নেই কেন? জবাবে আসাদ বলেন, আসাদ উত্তর দেন মঞ্চে আসার জন্য আমাকে পাশ দেওয়া হয়নি। বাইরে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছিলাম।
এরপর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, আসাদ মঞ্চে নেই কেন? কেন তাকে পাশ দেওয়া হলো না? এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আসাদ সব সময় নৌকার বিরোধিতা করেন। এ কারণে তাকে পাশ দেওয়া হয়নি। তার ওপর দলের নেতারা ক্ষু”ব্ধ।
এ সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল বলেন, তিনি আমাকে ফেল করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আসাদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তুমি নৌকার বিরোধিতা করো কেন? জবাবে আসাদ বলেন, আমি কখনো নৌকার বিরোধিতা করি না। যারা দলের নাম ভাঙিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে, দল বিক্রি করে, জামাত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা করে, আমি শুধু তাদের বিরোধিতা করি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনেক কিছুই শুনি। সে নৌকার বিরোধিতা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমি নেব। এজন্য তাকে জনসভায় ডাকা হবে না কেন? প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া শুনে জেলা নেতারা দুঃখ প্রকাশ করেন।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আসাদুজ্জামান। এ সময় রাজশাহী জেলার প্রতিটি এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেন আসাদ। তবে তাকে কোণঠাসা করতে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অপসারণ করা হয়।
প্রসংগত, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়, তিনি জানুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বহু বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক ভূখণ্ডে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ও অগ্রগতি আনার কৃতিত্ব পেয়েছেন। শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগকে একাধিক সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী করতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক একীকরণ সহ বেশ কয়েকটি মূল উদ্যোগের অগ্রভাগে রয়েছেন। বিরোধিতা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, তিনি বাংলাদেশে একজন জনপ্রিয় এবং সম্মানিত নেত্রী হিসেবে রয়েছেন।