আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দল গোছানো অব্যাহত রেখেছে এবং নিচ্ছে কৌশল। এদিকে আসন্ন নির্বাচনের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করেছেন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য দলগুলোর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। তবে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা এমন প্রশ্নের চলমান বিতর্ক সমাপ্তির প্রস্তাব জানিয়েছেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সাল। এ বিষয়ে তিনি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিটি নির্বাচনের আগে গঠিত হয়ে থাকে, যেটার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক কখনো শেষ হবে না। তাই, এই বিতর্কের উত্তরণ ঘটানোর জন্য ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং পরিবর্তন আনাটা অত্যন্ত জরুরী।
সোমাবার বিকালে সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত সিলেট বিভাগীয় জাকের পার্টির ইসলামী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রস্তাবনা হিসেবে মোস্তফা আমীর জানান, ‘প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তির প্রয়োগ করে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ও ফলাফল বিতর্কমুক্ত রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে ভোটগ্রহণে ব্লক চেইন পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। একইসাথে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ নিজ দলের সদস্য ও তালিকাভুক্ত ভোটারদের আইডি কার্ড, ছবি ও স্বাক্ষরসহ তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দান করতে হবে, নির্বাচন কমিশন তা ডাটাবেজ তৈরি করে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে এবং নির্বাচনী ব্যয় সীমার বাধ্যবাধকতা তুলে দিতে হবে।’
তিনি দাবি করেন, ‘ব্লকচেইন পদ্ধতিতে ভোটদান প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। ব্লকচেইন মূলত অর্থ লেনদেনের টেকনোলজি। এতে সমস্ত তথ্য উপাত্ত সুরক্ষিত থাকে। কোনো গরমিল সম্ভব নয়। ব্লকচেইন একমাত্র টেকনোলজি, যা হ্যাক করা যায় না কোনোভাবেই।’
এসময় তিনি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য এবং ভোটারদের ডাটাবেজ তৈরি প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজ নিজ দলের সদস্য ও ভোটারদের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকার ডাটাবেজ তৈরি করে তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় এবং এবং নির্বাচন কমিশন এ ডাটাবেজ মোবাইল অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে তা সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে রাজনৈতিক দলের ভোট সংখ্যা নিয়ে আগাম ধারণা তৈরি হয়ে যাবে। ভোটদানের পর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থাকবে না।’
জাকের পার্টি টাকা দিয়ে ভোট আকর্ষণকে সমর্থন করে না জানিয়ে মোস্তফা আমীর ফয়সল বলেন, ‘গোপনে সবাই বিপুল অঙ্কের টাকা নির্বাচনে ব্যয় করেন। ফলাফলকে প্রভাবিত করেন। ৭৩-এর আগে এমন ছিল না।
তিনি আরো যোগ করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সে সময়কার রাজনৈতিক দল যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী এবং সেই সময়ে তিনি সরকার দলের প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামানকে বিপুল ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করেছিলেন। তখন ওয়াহিদুজ্জামান নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য কোটি কোটি টাকা ঢালেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাথে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সফলতা পাননি। বঙ্গবন্ধুর ছিল ভিন্ন ধরনের ক্ষমতা, তিনি মানুষকে তার প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার কারণে টাকা এবং পেশী শক্তি তাকে পরাজিত করতে পারেনি। রাজনীতির সেই যে ধারাটি সেটি আবার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। যদি বঙ্গবন্ধুর সেই প্রেম প্রীতি ভালোবাসার শক্তিকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়, তবেই এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে অন্যথায় নয়।