জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ২৬টি আসনে সমঝোতায় রেখে সন্তুষ্ট করা হয়েছে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে। ঢাকা-১৮ আসনটি তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরের জন্য ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ আসনে সমঝোতা হলেই নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জাপা।
দুই দলের একাধিক সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করেও ঢাকার কোনো আসনে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি জাপা।
এত দিন ঢাকার কোনো আসন ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে অনড় ছিল আওয়ামী লীগ। শেষ মুহূর্তে অবস্থান পরিবর্তন করে দলটি।
ঢাকা-৪ ও ৬ আসনে বর্তমানে যে দুই সংসদ সদস্য রয়েছেন তারা দুজনই জাপার। তারা হলেন দলের কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও কাজী ফিরোজ রশীদ।
দুজনেই ২০০৯ সাল থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার তাদের দুজনের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। আসন সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান কাজী ফিরোজ রশীদ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী নিয়ে গত শুক্রবার জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগ যে ২৬টি আসন নিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব করেছিল তার তালিকায় সিলেট-৩ আসন রয়েছে।
ঢাকা-১৮ আসনে শরীফা কাদেরকে ছাড় দিতে গিয়ে সিলেটের এই আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ আসনে জাপার প্রার্থী আতিকুর রহমান।
জাতীয় পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জিএম কাদের দলের চেয়ে নিজের স্বার্থ বেশি দেখেছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের আসন ছেড়ে দেওয়ার পর স্ত্রীর জন্য ঢাকার আসনে জয়ী হয়ে নির্বাচনে যান তিনি।
দিনশেষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬টি আসনে সমঝোতায় সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে জাতীয় পার্টিকে।
এতে আসন সমঝোতা নিয়ে দুই সপ্তাহের নাটকের অবসান ঘটে। সম্মত আসন থেকে নৌকার প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তবে ২৬ আসনের মধ্যে ২৪টিতে জাপা প্রার্থীদের লড়তে হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে। জাপা এবার মোট ২৮৩ আসনে ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এবার নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ২০০৮, ২০১৪ কিংবা ২০১৮ সালের মতো নয়। আসন সমঝোতা হলেও জাপা প্রার্থীদের স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। আগের তিন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপা জোটবদ্ধ কিংবা সমঝোতা করে নির্বাচন করেছিল, কিন্তু জাপা প্রার্থীদের এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হয়নি।
২৬টি সম্মতিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত নির্বাচনে ১১টি আসনে ঐক্যমত্য হয়নি। তবে নতুন ১১টি আসন নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য জাপা কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নাসরীন জাহান রত্নাসহ গুরুত্বপূর্ণ সাত সংসদ সদস্যের আসন নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি।
এবার চার দফা আলোচনা হলেও প্রত্যাশিত আসনে ছাড় পায়নি জাপা। দলীয় প্রার্থীদের জয়ের নিশ্চয়তা নেই। বিভিন্ন মহলে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হলেও আসন সংখ্যা বাড়াতে পারেনি দলটি। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি হবে না তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে নানা সংশয় ছিল। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববার সবার চোখ ছিল জাপার দিকে। বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে ভোটের উপস্থিতির ঘোষণা দিয়ে সকল সন্দেহ ও গুজবের অবসান ঘটান সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্নু।
চুন্নু বলেন, “সব বাধা অতিক্রম করে আমরা নির্বাচন করছি। কোনো চাপ নেই, আমি স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। তিনি দাবি করেন, “কোনো জোট হয়নি।” আসন সমঝোতা হয়নি। তবে কিছু আসনে কৌশল রয়েছে।