Monday , December 23 2024
Breaking News
Home / opinion / আল জাজিরার,’অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’,নিয়ে কথা বললো সে,আর আমি এই অপেক্ষায় ছিলাম:সাবেক সেনাকর্মকর্তা

আল জাজিরার,’অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’,নিয়ে কথা বললো সে,আর আমি এই অপেক্ষায় ছিলাম:সাবেক সেনাকর্মকর্তা

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক চৌকস সেনা কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান। একটা সময়ে দেশে থাকলেও বর্তমানে তিনি বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। আর সেখানে থেকেই দেশের সমমসাময়িক নানা বিষয়ে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করে থাকেন। সম্প্রতি তিনি তার পূর্ণ একটি লেখনী নতুন করে প্রকাশ করেছেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-

আমার গত বছরের এই দিনের পোস্ট; তবে তখন আমার সেই প্রভাবশালী বন্ধুর নাম তখনও পাবলিকলি বলিনি। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন তার নাম মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান!

রিপোস্ট:

হিং টিং ছট্: ১

ছোটবেলা থেকেই আমি মনে মনে জানতাম আমার বন্ধু ভাগ্য ঈর্ষণীয়। বয়স ৫০ পেরুনোর পর দেখলাম চিরকালের বন্ধুবৎসল আমার শিকেয় বিশ্বাসযোগ্য বন্ধুর সংখ্যা অসম্ভব সংকুচিত হয়ে গেছে!

বন্ধুদের কাছে ছোট-বড় ধাক্কা জীবনে অনেক খেয়েছি তবে কোনটাই মনে বড় দাগ কাটেনি। প্রথম যে বন্ধু মনে কষ্ট দিল সে শুধু আমার নয় আমার পরিবারের সাথে সখ্যতা ছিল।

আমার সন্তানদের সাথে তার সন্তানদের সখ্যতা ছিল।

সেই বন্ধু আমি প্রবাসে আসার আগে নিজ থেকেই আমার অবসরভাতা তোলার দ্বায়িত্ব নিয়েছিল। আমাদের দিন যাচ্ছিল মন্দ নয়। একদিন হঠাৎ বন্ধু আমাকে টেক্সট করলো, “দোস্ত, তোর অবসরভাতা আমি আর তুলতে পারবোনা”।

খোঁজ নিয়ে জানলাম, আমার এক প্রভাবশালী বন্ধুর হুমকির কারণে তার এই অবস্থান। ঘটনাটা আমি স্বাভাবিক ভাবেই নিলাম। বন্ধু বেচারা সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেবার পর প্রাইভেট সেক্টরে চাকুরী করে সরকার বান্ধব কোম্পানীতে তাই সার্ভাইভালের জন্য তার হয়তো অন্য কোন উপায় ছিলনা!

কিছুদিন আগে আবার বড় একটা ধাক্কা খেলাম। বাংলাদেশে ইস্যুর তো কোন অভাব নেই, মাসখানেক আগে এমন কোন এক ইস্যুতে আমার এক নিকট বন্ধু আমার বাসায় বেড়াতে এসে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বলল, “দোস্ত দেশে এসব কি হচ্ছে? এত অরাজকতা তো মেনে নেয়া যায়না! আমাদের কিছু একটা করতে হবে”!

আমি কাচুমাচু হয়ে বলি, কী করতে চাস তুই? আমি তো প্রতিবাদ করি সোশ্যাল মিডিয়াতে, যদিও এর কোন ইম্প্যাক্ট নাই কোথাও! তোর কী প্ল্যান?

“চল, আমরা সমমনা কয়েকজন অফিসার এই সমস্যা নিয়ে বসে আলোচনা করি”!

: আর ইউ সিরিয়াস, দোস্ত?

: হ্যা দোস্ত, খুব সিরিয়াস! এটার জন্য আমাদের পলিটিক্যাল ব্যাকআপ লাগবে!

: দোস্ত তাইলে তো আমি নাই। আমি যা লিখি তা আমার নিজস্ব ভাবনা, আমার ব্যক্তিগত প্রতিবাদ! আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে নাই!

: কী বলিস তুই? রাজনৈতিক ব্যাকআপ না থাকলেতো তুই টিকতে পারবি না, দোস্ত!

: আমার একান্ত ব্যক্তিগত প্রতিবাদে কেন রাজনৈতিক সমর্থন লাগবে??

কথাবার্তার এই পর্যায়ে আমি বুঝে গেলাম, আমার বন্ধুকে আমার সেই প্রভাবশালী বন্ধু বা সেই পর্যায়ের কেউ আমার রাজনৈতিক আনুগত্য জানার চেষ্টা করছে। কারণ এই বন্ধু আজীবন বিপদজনক সবকিছু এড়িয়ে সিনিয়রের বিশ্বাসভাজন হয়ে চলেছে। হঠাৎ করে তার এই বিপ্লবী হবার সম্ভাবনা/বাসনা একেবারেই স্বাভাবিক নয়!

এই ঘটনার ২/৩ মাস পরে সেই বন্ধুর সাথে অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান প্রসংগে কথোপকথনে সে জানালো, “এই ডকুমেন্টারি তো বিশ্বাসযোগ্য না, আল জাজিরা কিছুই প্রমাণ করতে পারে না! আমি আসলে এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম”।

: আচ্ছা দোস্ত, কিছুদিন আগে দেশ ঠিকমত চলছেনা/ আমাদের কিছু একটা করতে হবে এটা কেন বলেছিলি? তোর মনে হচ্ছে দেশ ঠিকমত চলতেছে? আমাদেরনা কোন পলিটিক্যাল ব্যাকআপ লাগবে এগুলো কেন বলছিলি?

-না মানে, ইয়ে…

সে আর কী কী বলেছিল তা আর নাইবা বললাম!

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দেশে এমন একটা পরিস্হিতি বানিয়েছে যেন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিএনপির রাজনীতি করলেই সে এবং চোদ্দ গুষ্টি সবাই আগুন সন্ত্রাসী আখ্যা পায়। এদিকে ছাত্রলীগ হচ্ছে সাচ্চা দেশপ্রেমিক। আর জামাতের কথা নাই বললাম!

আমি বিএনপি, আওয়ামীলীগ দুইদলের শাসনআমলের অনিয়ম দেখেছি তাই কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই। তবে গত ১৩ বছরে আওয়ামীলীগ যে অনিয়মের লীলাভূমি বাংলাদেশকে বানিয়েছে সেই তুলনায় বিএনপি জামাত শিশুতুল্য।

যাহোক, তারপরও রাজনৈতিক দল ছাড়া আমাদের গতি নেই। আমরা যদি অন্তত ৫ বছর পর পর একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারতাম তবে হয়ত আমরা নিজেদের ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ বলে দাবী করতে পারতাম!

যে কোন উপায়ে, যে কোন প্রান্তে, আমি তারেক রহমানের টাকা খেয়ে লিখছি বা জামাতের সাথে আমার সংশিষ্টতা রয়েছে আবিষ্কার করতে পারলেই আমাকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া যাবে! এটা আবিস্কার কারার জন্যই হয়ত সেই বন্ধু একনায়কতন্ত্রের প্রতিনিধির হয়ে আমার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা জানার চেষ্টা করেছিল!

তবে আশার কথা হচ্ছে এতসব টারময়েলের মধ্যেও ফিল্টার হয়ে যে কয়জন বন্ধু এখনো আছে তাঁরাই খাঁটি সোনা। এতকিছুর পরও আমি বলবো, আমার বন্ধু ভাগ্য অসামান্য।

আমার সকল বিশ্বস্ত গুণীজন বন্ধুদের জন্য লাল সেলাম আর ভালবাসা

চলবে……..

(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘হিং টিং ছট’ কবিতায় বাঙালি চরিত্রকে যেভাবে তীর্যকভঙ্গিতে, অল্পকথায় প্রকাশ করেছেন তা আজো যথাযথ ও স্পষ্ট।)

প্রসঙ্গত, এর আগেও মুস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের অনেক কিছু নিয়ে লেখালেখি করেছেন। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর নানা ধরনের কর্মকান্ড আর ভেতরের অনেক খবর প্রকাশ করেছেন সকলের সামনে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ পরিচিত মুখ তিনি।

About Rasel Khalifa

Check Also

আগামীকাল ঢাকায় বড় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা, আপাতত যানবাহন তল্লাসি করুন: ইলিয়াস হোসেন

আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন, যারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *