Wednesday , October 16 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আলোচিত সেই গোপন কক্ষে কি হতো, অবশেষে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন মালা খান

আলোচিত সেই গোপন কক্ষে কি হতো, অবশেষে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন মালা খান

বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম) এর সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন তার বিভিন্ন কার্যকলাপ ও ব্যক্তিগত জীবনের একটি বিতর্কিত দিক নিয়ে। মালা খান টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের নিকলা মহাব্বত গ্রামের আবুল ফজল খানের মেয়ে। ঢাকায় তার বাবার চাকরির সুবাদে তিনি সেখানেই শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। এলাকাবাসীর কাছে তার পরিচয় কেবল বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার নয়, বরং গরু ও ছাগলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্কিত একজন হিসেবে।

মালা খান বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গরু ও ছাগলের খামার পরিচালনা করছেন। তার ছোট ভাই এই খামারটির পরিচালনায় সাহায্য করেন। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু ও ছাগল কিনে খামারে মোটাতাজা করা হত, যা পরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হতো। সম্প্রতি গরু ও ছাগল নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা দেশব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকেই মালা খানের খামার থেকে অনেকেই গরু ও ছাগল নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে, তার চাচা তোফাজ্জল খানও বেশ কয়েকবার গরু নিয়ে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেছেন। এলাকার মানুষের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে, মালা খান বিভিন্ন সময়ে অনেককে চাকরি দেওয়ার মাধ্যমে স্থানীয় যুবকদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, যদিও চাকরি পাওয়ার শর্ত সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব হয়নি।

মালা খানের ব্যক্তিগত জীবনও বেশ আলোচনায় এসেছে। তার স্বামী মোস্তফা আনোয়ার একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বর্তমানে তারা দুজনেই কানাডায় অবস্থান করছেন। তাদের তিনটি মেয়ে রয়েছে, এর মধ্যে দুইজন কানাডায় পড়াশোনা করছে। এছাড়া, মালা খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি জাল সনদপত্রের মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যা ২০১৫ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালা খান এলাকায় খুবই জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি, যিনি অনেকের চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তার চাচা তোফাজ্জল খান স্থানীয় হাটের ইজারাদার এবং অনেকেই বলছেন যে, তিনি মালার ব্যবসায়িক কার্যকলাপে সহায়তা করেছেন। তবে, এই সহযোগিতার বিনিময়ে কিছু অর্থ প্রদান হয়েছে কিনা, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।

মালা খান বিআরআইসিএম এ চাকরি পাওয়ার পর অনেকেই তার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। একজন চাকরিজীবী সোহান জানান, কেরানীগঞ্জে তার ভাইয়ের খামারের বিষয়ে জেনেছেন, তবে মালার খামারের বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই। তিনি আরও বলেন, অফিসের যেসব লোকজন বিরোধিতা করেছেন, তাদের কাছেই অফিসের চাবি ছিল। যদিও কোনো অবৈধ কার্যকলাপের অভিযোগ নেই।

মালা খান নিজে এই সব অভিযোগকে সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমি গত ৫ আগস্টের পর অফিসে যাইনি, কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।” তিনি আরও দাবি করেন যে, অফিসের লোকজন আগে থেকেই তার গোপন কক্ষের বিষয়টি জানতেন এবং এখন তা নিয়ে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।

মালা খানের গল্পটি যে শুধুই তার ব্যক্তিগত জীবনের নয়, বরং দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতকেও স্পর্শ করে। তিনি একটি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, এবং তার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের যুবকদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। যদিও নানা অভিযোগ তাকে ঘিরে রয়েছে, তা সত্ত্বেও স্থানীয় মানুষ তার প্রতি আস্থা রেখেছেন।

এই ঘটনাবলীর মধ্যে মানবিক দিকটি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মালা খান যেভাবে স্থানীয় যুবকদের জন্য চাকরি ও সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি তার খ্যাতি ও অবস্থানে কি প্রভাব ফেলবে, তা আগামী দিনগুলোতে পরিষ্কার হবে।

মালা খানের জীবন কাহিনী একদিকে যেমন অনুপ্রেরণার, অন্যদিকে সেই কাহিনীই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের জন্ম দিয়েছে। তিনি যদি সত্যিকার অর্থে নির্দোষ হন, তবে তার প্রতিক্রিয়া ও প্রতিশোধের পথটি কেমন হবে, সেটাই এখন দেখতে হবে।

About Nasimul Islam

Check Also

চায়ের আমন্ত্রণে আসা ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *