দেশের অনলাইন ক্যাসিনোর ডন হিসেবে পরিচিত সেলিম মিয়া ওরফে সেলিম প্রধান তার নিজ এলাকা রূপগঞ্জে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। ‘ক্যাসিনো গুরু, থাই ডন’ খ্যাত এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী শনিবার রূপগঞ্জের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে গিয়ে দেখা মেলে।
সেখানে নিজেকে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরতে ‘আই অ্যাম ব্যাক, আই ডোন্ট কেয়ার অ্যানিওয়ান’-এমন ইংরেজি ঝেড়েছেন তিনি।
বতিনি বলেন, ‘বাকি জীবন রূপগঞ্জেই কাটিয়ে দেব। আমার গ্যারান্টি, আমি রূপগঞ্জ পরিবর্তন করে ছাড়ব।
তবে হঠাৎ করে এই ক্যাসিনো রাজার রূপগঞ্জে ফিরে আসাকে অশনি সংকেত বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। তারা বলছেন, এই সেলিম অনলাইন জুয়া (ক্যাসিনো), স্পা ব্যবসা, সীমান্তের পশুর খাটালে চাঁদাবাজি, দেশে-বিদেশে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধের মাস্টার।
নির্বাচনের আগে তার মতো মানুষের রূপগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাসের খবর ভালো লক্ষণ নয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ৫৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল দুদুকের দায়ের করা মামলায় তাকে ৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালতে আরো ৩টি মামলা চলছে।
এদিকে সেলিম প্রধান শনিবার একটি পূজা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘আমি ৪ বছর ১ দিন জেলে ছিলাম। ঠিক কত বছর পর রূপগঞ্জে ফিরেছি বলতে পারব না। আমার এলাকায় অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে, কিন্তু ভালো ঘটনাও ঘটে। এখন রূপগঞ্জেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেব। এলাকা বদলে দেব। এটা আমার গ্যারান্টি। পরিবর্তন নিয়ে রূপগঞ্জ ছাড়ব।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময় র্যাব-১ সেলিম প্রধানকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। বনানীর গুলশানে তার বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় হরিণের চামড়া। একই দিন সেলিম প্রধানকে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জানা গেছে, সেলিম প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন।
সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি শোনা যায়, সীমান্তে জাল টাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে ছিল।