মাত্র দশ বছরের ক্ষমতায় সামান্য তেল বিক্রেতা থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান লালমনিরহাটের আদিতমারীতে সাবেক বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী। সম্প্রতি এ ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক শোরগোল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। তবে সময়ের ব্যবধানে দল পরিবর্তন হতেই বদলে যান মোসাদ্দেক হোসেনও। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দিতেই ভাগ্য বদলে যায় তার।
জানা গেছে, উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মকছুল চৌধুরীর ছেলে মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী কর্মজীবনের শুরুতে খোলা বাজারে ডিজেল ও পেট্রোল বিক্রির দোকান করতেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবীব দুলু মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরীকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় করেন।
দুলুর আর্শিবাদ পুষ্ট মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী ২০০৬ সালে ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হলেও গত ২০১১ সালে মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর গত ২০১৪ সালের ২৫ জুন তিনি মহিষখোচা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক এবং গত ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর ওই ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনে মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী সভাপতি নির্বাচিত হন। বিএনপি নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্বও দেন তিনি। গত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনের কিছু দিন আগে বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের যোগদান করেন মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী। নৌকা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। টানা দুই বার দুই ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান হয়ে ভাগ্য বদলে যায় তার।
সম্প্রতি তার মোবাইল নম্বরে মৃত ব্যক্তির বয়স্ক ভাতার টাকা চলে যাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ১১ নভেম্বরের ভোটে পুনরায় জয়লাভ করতে নৌকার মাঝি হিসেবে প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি। স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দুই দলের নেতা হিসেবে দুই বারের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী মাত্র ১০ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। পাড়া গাঁয়ে করেছেন আলিসান দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট বাড়ি। সেই বাড়ি সাজিয়েছেন দামি দামি আসবাবপত্রে। তিনি ঘুরে বেড়ান প্রায় ২৪ লাখ টাকা দামের গাড়িতে। এলাকায় কিনেছেন অনেক কৃষি জমি, করেছেন বড় বড় গোডাউন, আদিতমারীর বৈরাগীর ভিটা এলাকার ইটভাটায় শেয়ার, রংপুর শহরের মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি।
এদিকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করে মহিষখোচা ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মুরাদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিএনপির আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নানা ভাবে হয়রাণির অভিযোগ রয়েছে মোসাদ্দেক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। একই সাথে অবৈধ সম্পদ রক্ষায় পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা দুর্নীতির অভিযোগ।