রূপগঞ্জ পূর্বাচল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে ভূমিদস্যু মোহাম্মদ হোসেন ওরফে টেম্পু হোসেন। এই হোসেন নিরীহ মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল, জালিয়াতি, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত।
তার নাম শুনলেই আতঙ্কিত রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের মুশুরী গ্রামের বাসিন্দারা। হোসাইনের অপকর্মের শিকার ব্যক্তিরা যখন তাদের মুখ খুলল তখন তারা চরম সংকটে পড়েছিল। থানায় মামলা করার পরও অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির জমি জোরপূর্বক দখলের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এতিমখানার ওয়াকফ জমিও এর আওতা থেকে বাদ যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, রূপগঞ্জের এক দরিদ্র পরিবারে হোসেনের জন্ম। বাবা শামসুদ্দিন ব্যবসায়ী। দারিদ্র্যের কারণে ছেলেমেয়েরা আর লেখাপড়া করতে পারেনি। বাবার অভাব মেটাতে ঢাকা থেকে নিষিদ্ধ টেম্পো (বাচ্চা) চালান হোসেন। এরপর থেকে এলাকার লোকজন তাকে টেম্পু হোসেন নামেই চেনে।
এরই মধ্যে রূপগঞ্জের বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানিতে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে এলাকায় মাস্তানি শুরু হয়। এসব হাউজিং কোম্পানির মালিকদের সহায়তায় এলাকার বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ধীরে ধীরে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে হোসেন। এরপর আড়ালে মাদক বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জন করেন। পরে এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বচ্ছসেবক লীগের রূপগঞ্জ ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। এই পদ পাওয়ার পর থেকেই তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিরক্ত এলাকাবাসী।
ওই নেতার নির্দেশে ও অর্থায়নে জমি ব্যবসা শুরু করেন টেম্পু হোসেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমি দখল শুরু করেন। এলাকার নিরীহ দরিদ্র জমির মালিকদের টার্গেট করে হোসেন জোরপূর্বক জমি দখল ও জমি ভরাট শুরু করে। নায়েব আলীর ছেলে ইসরাফিল টুকু, ভিংরাবোর সজীব, কাওসার, নবী হোসেনের ছেলে শাওন, মামা ইব্রাহিম, জয়নালকে নিয়ে গড়ে ওঠে হোসেন বাহিনী।
পূর্বাচল রূপগঞ্জের জলাধার ধীরে ধীরে গ্রাস করছে হোসেন বাহিনীর হাতে। হোসেন বাহিনী রাতের আঁধারে বালু ফেলে এলাকার নিরীহ দরিদ্র মানুষের জমি দখল করে জাল দলিল তৈরি করে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। এভাবে অবৈধ টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে সে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও তার নিজ গ্রামের লোকজন মনে করেন, হোসেনের হাতে আলাদিনের প্রদীপ আছে, নইলে এত অল্প সময়ে এত টাকা কীভাবে থাকল। তার অবৈধ অর্থ থেকে স্থানীয় আওয়ামী নেতারা, থানা পুলিশ বিভিন্ন পর্যায়ে বেতন-ভাতা দেয়। বিনিময়ে আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় জমি দখল ও পাহারা দেয় সকল অন্যায়কে বৈধ করতে। ফলে দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে ভূমিদস্যু টেম্পু হোসেন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, মোহাম্মদ হোসেন একজন বন্দুকধারী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি কোনো অপরিচিত ব্যক্তি ওই এলাকায় জমি কিনতে বা বেড়াতে গেলে মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গীরা তাদের জিম্মি করে। তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলে মামলা করতে হবে।
ভুক্তভোগী রুহুল আমিন জানান, কয়েকদিন আগে হোসেন তার দলবল নিয়ে স্থানীয় মসজিদ ও এতিমখানা জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদে হোসেনের অপকর্মের প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে এলাকায় মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সাবেক শিক্ষক আনিস বলেন, নুন পেতে পান্তা ফুরাত আর এখন অস্ত্র ও দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষের জমি লট বাহাদুরের আদলে বিক্রি করা হয়। কারা তাদের অস্ত্র লাইসেন্স ও দেহরক্ষী দেয়। তাদের কোন নিয়ম নেই। গোটা রূপগঞ্জ সয়লাব এই টাইপের হোসেনে। তাদের আইনের আওতায় আনলে সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকবে।
হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে রূপগঞ্জের পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের হোসেন যুবরাজ বলেন, রূপগঞ্জ থানা পুলিশ মাদক সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে তৎপর রয়েছে, অনেক অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। অন্য কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এলাকাবাসীর দাবি অবিলম্বে হোসেনের ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বারবার কল ও টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, পরে তিনি ফোন করে বলেন, যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা এবং আমার শটগানের লাইসেন্স আছে, শটগান কাজ করতে মাঝে মাঝে আমাকে গুলি করতে হয়। আর তুমি এসে মুখোমুখি কথা বল।