গত কয়েক মাস আগেই দেশ জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এই দামকে ঘিরে দেশ জুড়ে এক অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই অস্থিতিশীল পরিবেশ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিশ্ব বাজারের সাথে সমন্বয় করে এই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ব বাজারের সাথে সমন্বয় করে আবার কমানো হবে দাম। তবে নতুন করে আবারও তেলের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এই নিয়ে বেশ কিছু কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
বাজেট ঘাটতি সহনীয় রাখতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সাথে সারের দামও বাড়তে পারে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে জাতীয় কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় এ সুপারিশ করা হয়। অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে সুপারিশে সার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের কথা বলা হয়। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা অর্জিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সে জন্য সংশোধিত বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখা হবে। আগামী এপ্রিলে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করা হবে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয় ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ফলে সংশোধিত বাজেটে এটি বহাল থাকছে বলে জানা গেছে। তবে বহুজাতিক ঋণদানকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সরকারের প্রাক্কলনের চেয়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম হবে বলে বলে মত দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আইএমএফ বলেছে, ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হবে বলে অর্থমন্ত্রী মনে করেন। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনসহ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা তা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি।’ উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া সারের দামও বেড়ে গেছে বিশ্ববাজারে।
এসব কারণে সরকারের বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর ঘাটতি সহনীয় রাখতেই সার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এবার বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে সার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এ খাতে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি লাগতে পারে। বাজেট ঘোষণার সময় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানের চেয়ে অর্ধেক ছিল। ফলে সরকার এ খাতে কোনো বরাদ্দ রাখেনি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম প্রায় দ্বিগুণ বাড়ায় এ খাতে ভর্তুকি লাগতে পারে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাড়তি ভর্তুকির চাপ কমাতে হলে সার ও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা ছাড়া আমাদের কাছে বিকল্প কিছু নেই। এটা যত দ্রুত করা যায়, ততই চাপ প্রশমিত হবে।’ বাজেট তৈরিতে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুতে আরেক দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে।’
গত দুই বছর ধরে গোটা বিশ্ববাসী বৈশ্বিক মহামারি কবলে পরেছে। এরই সুত্র ধরে বিশ্ব বাজারে ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। তবে সম্প্রতি এই তেলের দাম অনেকটাই কমেছে বিশ্ব বাজরে। এদিকে বাংলাদেশ দেশে বর্তমান সময়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া নতুন দামেই বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল।