Tuesday , November 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ বাধ্যতামূলক, বিপাকে গ্রাহক ও ব্যাংক

আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ বাধ্যতামূলক, বিপাকে গ্রাহক ও ব্যাংক

সারাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে নানা ধরনের  অবৈধ কার্যক্রম চলে। যার জন্য এবার নেয়া হয়েছে অভিনব পদক্ষেপ। এতে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক কর্মকর্তারা।  সাথে যারা ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণকারী রয়েছে তারাও পড়েছে বিপাকে। বিশেষ করে অনেক ব্যাংক রাজস্ব ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে থাকে যার জন্য এই ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।  এই শর্ত সম্পর্কে এক সংবাদমাধ্যম তাদের পোস্টে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রকাশ করেন।

ওই সংবাদ মাধ্যম জানায়, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এটি এখন ছোট ঋণ, ক্রেডিট কার্ড এবং সঞ্চয় অ্যাকাউন্টগুলিকে প্রভাবিত করছে। এবারের বাজেটে ৩৮ ধরনের সেবা গ্রহণের জন্য আয়কর রিটার্নের প্রমাণ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অনেক পরিষেবা শুধুমাত্র ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) জমা দিয়েই পাওয়া যেত। কিন্তু এবার অনেক ক্ষেত্রেই রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দিতে হয়েছে।

যে পরিষেবাগুলির জন্য রিটার্ন জমা দিতে হবে তার মধ্যে একটি হল 5 লক্ষ টাকার বেশি ঋণের আবেদন, 5 লক্ষ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ, কোনও কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হওয়া। অনেক ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা ব্যাংকে ঋণ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে, ক্রেডিট কার্ড এবং সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরাও আয়কর রিটার্ন ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে অক্ষম।

এখন ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ টাকার বেশি হলেই গ্রাহককে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তা না হলে ব্যাংক ঋণ দেয় না। কারণ, ফেরত ছাড়া ঋণ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বছরের বাজেট বিলেও এ ধরনের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এদিকে যারা আগে ব্যাংক থেকে এসব সেবা নিয়েছেন তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। ফলে যারা বিভিন্ন কারণে টিআইএন নিয়েছেন, কিন্তু রিটার্ন দিচ্ছেন না, তাদেরও এখন রিটার্ন দিতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাউথ বেঙ্গল এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ডস মোহাম্মদ শফিউল আজম ইত্তেফাককে বলেন, শুধুমাত্র রিটার্নধারীরাই ক্রেডিট কার্ড দিতে পারবেন না। দেশে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের টিআইএন রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২.২ মিলিয়ন মানুষ তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র টিআইএন দিয়ে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা যেত। এখন যাচ্ছে না। অর্থাৎ এ কারণে ক্রেডিট কার্ডের বাজার ছোট হয়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের না দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। তিনি বলেন, বাজেটে ক্রেডিট কার্ডে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করায় এ খাতে তাদের ক্রেডিট কার্ড বিক্রি ও ব্যবসা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যাংকের পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ছোট ব্যবসা ঋণ এবং নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, বাজেটে বিভিন্নভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। ফলে ব্যাংকের আমানতও বড় ধাক্কা খেতে পারে। এতে ব্যাংকের ব্যবসায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগতে পারে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়াতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেকের করযোগ্য আয় আছে কিন্তু কর দেন না। এই উদ্যোগের ফলে অনেকেই বাধ্যতামূলকভাবে করের আওতায় আসবেন।

ব্যাংকাররা বলেছেন, অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে ক্ষুদ্র ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। যাঁরা ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করেন, তাঁরা ছোট ঋণ ও কার্ড নিতে পারতেন। তারা এই পরিষেবাগুলি পেতে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) নেয়, কিন্তু রিটার্ন জমা দেয় না। এখন রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে এসব সেবার প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ব্যবসা খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ঋণ থেকে বঞ্চিত হলে কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে। ব্যাংক ঋণ দেবে—এটা ব্যাংকের কাজ। আর আয়কর দেওয়া বা না দেওয়া এনবিআরের কাজ। তিনি মনে করেন একটির সাথে আরেকটির যোগসূত্র স্থাপন করা অযৌক্তিক। এদিকে বাজেটে ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের সুদের ওপর উইথহোল্ডিং ট্যাক্স ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক হিসেবে ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যালেন্সের ওপর আবগারি শুল্ক ৪০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে গ্রাহকরা অনেক বেশি চাপে আছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। ২০২১  সালের জুন মাসে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন ছিল ১৯৩৫ কোটি টাকা। গত জুনে এই লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। বাজেট-পরবর্তী ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের পরিসংখ্যান এখনও আসেনি। ব্যাংকাররা আশঙ্কা করছেন যে জুলাই থেকে ব্যবহার কমে গেছে। অন্যদিকে টিআইএন দিয়ে আগে সঞ্চয়পত্র কেনা হলে এখন রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখাতে হবে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগেও অনেকবার এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হয়।  তবে এ বিষয়ে নিয়ে এবার কঠোর হতে চলেছে সরকার।  কোনভাবেই এই নিয়মের বাইরে গিয়ে কাজ করলে অবশ্যই তাকে শোকজ দিতে হবে।  যদি সেটাতেও  বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

About Nasimul Islam

Check Also

নির্বাচন দিতে দেরি করলে মানুষ সন্দেহ করবে, সমস্যা বাড়বে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হলে দেশের সমস্যা আরও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *