আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভা ও সমাবেশ করছেন। বিরোধী দল বলছেন নিরেপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় তারা। নিরেপেক্ষ সরকার না দিলে বিরোধী দল নির্বাচনে আসবেন না। সম্প্রতি বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা।
বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তারা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানান। জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাইরে একটি থ্রেডও রেহাই দেওয়া হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে তারা এ কথা বলেন। শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও বিএনপির সংসদ সদস্যদের নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রস্তাবিত ছাঁটাই নিয়ে আলোচনায় স্পিকার ড. আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না দাবি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। একই সঙ্গে সরকারের কাছে তত্ত্বাবধায়ক দাবি করেন ড.
এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি পাকিস্তানে থাকুক না কেন, তাদের নির্বাচনের জন্য ডাকা উচিত। তাদের দাবি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাইরে এই প্রশ্নে একটি থ্রেডও রেহাই পাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপিদলীয় দুইজন সংসদ সদস্য বিগত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ তারাই ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে এসেছেন। তারা এই সংসদে নিয়মিত কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমেরিকাসহ বিশ্বের কোথাও বলার সুযোগ নেই শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে হত্যার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিবরণ তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে আমি হ্যাঁ-না ভোট দেখেছি। রাষ্ট্রপতি পদে ৯৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু কাউকে নির্বাচনে যেতে হয়নি। বিএনপি শাসনামলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা সবাই জানেন। মাগুরা উপ-নির্বাচনে কী হয়েছে তা সবাই জানে। তাদের সময়ে আমরা দেখেছি বিচারপতি আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন। এ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির সংসদ সদস্য ড. হারুনুর রশীদ বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী না হলে, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হলে সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, গত দশ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের মনে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচন করবে না। স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন ও জনপ্রশাসনের লোকজন নির্বাচিত হন। সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা এই গ্রহের মানুষ, অন্য গ্রহের নয়। তাই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে।
হারুন বলেন, বর্তমান ইসি বলছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ইভিএমের ভোটকেন্দ্রে ডাকাত ধরা। সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল ইভিএম চায় না। শুধু ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলন শুরু করলে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপিকে ছাড়া আজ কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? হবে না আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে কীভাবে নির্বাচনে আনা যায় সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিরপেক্ষ সরকারী ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, সকল দলের উপস্থিতে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এমনটাই চান দেশের জনগন। নির্বাচনে অরাজকতার সৃষ্টি হলে সেই নির্বাচন কখনই সুষ্ঠ হতে পারে না বলে দাবি অনেকেরই। বাংলাদেশে একটি গণতন্ত্র দেশ আর এই গণতন্ত্র দেশে প্রত্যেক বারের মত সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য ভোট হবে এমনটাই আশা সবার।