সাধারণত বর্তমান এ সমাজ নারীদের ক্ষেত্রে একটু বেশিই কৌতুহল। যেখানে তচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও নারীদের অবমাননার ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় থাকে নানা তিরস্কারমূলক শব্দ। আর যদি কোনো দোষ পাওয়া যায়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই! এরই জের ধরে এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন রাখি নাহিদ।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘মানুষের আনন্দ হচ্ছে মেয়েদেরকে অসহায় নির্যাতিতা দেখার মধ্যে। মেয়েরা চামড়া পুড়ায়ে রান্না করবে, বাচ্চা পালতে পালতে কাহিল হয়ে যাবে, আনম্যানেজেবল কাপড় চোপড়ের নিচে চাপা পড়ে থাকবে, সবার খাওয়া শেষ হলে তলানিতে পড়ে থাকা খাবার খাবে, সবার আগে ঘুম থেকে উঠবে, সবার পরে ঘুমাতে যাবে।
এইসব দেখাও একটা আনন্দ। ইনডিপেন্ডেন্ট, সেলফরেস্পেক্টওয়ালা মেয়ে দেখলে এই সোসাইটির বদ হজম হয়ে যায়। নিজের মত কোন মেয়ে বাঁচতে পারছে এটা দেখাটা অনেকের জন্য কোষ্ঠকাঠিন্যের মত পেইনফুল।
এইজন্য হাতে পায়ে বড় না হতে হতেই, পড়ালেখা শেষ হতে না হতেই ঘরের মানুষের থেকে বাইরের বেশী মানুষের চিন্তা শুরু হয় – এই ধ্যারাইঙ্গা মেয়ের বিয়ে দেয়না না কেন এর বাপ মা? বিয়ে হলে শুরু হয়, বাচ্চা নেয়না ক্যান?
আর কোন ডিভোর্সি মেয়ে যদি ইন্ডিপেন্ডেন্ট হয় তাহলে তো কথাই নাই। স্বামী ছাড়া আছে কিভাবে একা এই চিন্তায় পাড়াপ্রতিবেশীর ঘুম হারাম।
কোন মেয়ে যদি বিয়ে বাচ্চা স্বামী সংসার সব সামলেও পারফেক্ট থাকে, আনন্দে থাকে তাহলেও সমস্যা আছে। একদল বলবে সব ভান, খোঁজ নিয়ে দেখেন সংসারে ঝামেলা ঠিকই আছে।
কোন মেয়ে যদি কারো উপর নিরভরশীল না হয়ে নিজের ইচ্ছা মত বাঁচে, নিজের পছন্দের কাপড় পরে, নিজের পয়সায় বাড়ি গাড়ি কেনে এবং কোন ভাবেই যদি তার কোন প্রত্যক্ষ দোষ না পাওয়া যায় তাহলে শেষ অস্ত্র – এই মেয়ের চালচলন ঠিক নাই, এই মেয়ে নিশ্চয়ই দুই নাম্বার।
অফিসে উন্নতি হলে – আরে এমনে এমনেই উন্নতি হয় নাকি, বস এর সাথে নিশ্চয়ই সিস্টেম আছে।
এই হচ্ছে মেয়েদের অবস্থা।
একটা মাত্র জীবন পাড়া প্রতিবেশী ডিসাইড করে দেয় কতটুকু পড়তে হবে, কবে বিয়ে করতে হবে,বাচ্চা কখন এবং কয়টা নিতে হবে, কি কাপড় পরতে হবে।
এই যেমন আমি এখন স্বামীকে রেখে বিদেশ আছি। এতে অনেকের চিন্তা- ঘটনাটা কি ? স্বামী বাচ্চা দেখে ফেলে রেখে বিদেশে পড়ে আছে কেন? হাজবেন্ড এর সাথে ঝামেলা ? ডিভোর্স হইসে ? কুচ তো গারবার হ্যায় দায়া। ডাল মে জরুর কুচ কালা হ্যায়।’
যতদিন নারীদের নিয়ে সমাজের মানুষের মনে এমন ‘চিন্তাধারা’ দেখা যাবে, ততদিনই ঐ সমাজ এক অন্ধকারে ডুবে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। যেখানে কিছু করলেও দোষ, আবার না করলেও নানা বিপত্তিতে পড়তে হয় নারীদের। তাই সমাজ ও দেশ উন্নত করতে হলে আগে নারীদের সম্মানের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরী।